পাতা:বাল্মীকি রামায়ণ - উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়.pdf/৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

[ a ঈশ্বর। "অবতার হনেকেশঃ” এই ষে শাস্ত্রীয় বচন শুনিতে পাওয়া যায়, ভগবান রামচন্দ্র সেই অবতারের অন্ততর। গীতায় প্রকাশ আছে যে—

  • —বিনাশায় চ দুষ্কৃতাম। ধৰ্ম্মসংস্থাপনার্থায় সস্তবামি যুগে যুগে ॥” তাৎপৰ্য্য,—“আমি দুক্রিয়াশালী ব্যক্তিদিগের বিনাশের জন্য, ধৰ্ম্মসংস্থাপনোদেশে যুগে যুগে অবতাররূপে অবতীর্ণ হইয়া থাকি।”

সেই মহুদ্বাক্য রক্ষার জন্য ভগবান রামচন্দ্রের অবতারণা। এ স্থলে এরূপ প্রশ্ন সমুখাপিত হওয়া অসঙ্গত নহে যে, রামচন্দ্র যে অবতার, তাহারই বা প্রমাণ কি ? তদুত্তরে বলা যাইতেছে যে, শাস্ত্রে উল্লেখ আছে—ভগবান ঈশ্বর স্বঞ্জিকাৰ্য্যামুরোধে দশ অবতাররূপে অবতীর্ণ হইয়াছিলেন ; যথা— "মৎস্ত কূৰ্ম্মে বরাহশ নৃসিংহে বামনস্তথা। রামে রামশ্চ রামশ্চ বুদ্ধঃ কল্কী দশ স্মৃত: ॥” তাৎপৰ্য্য,—“মৎস্য, কূৰ্ম্ম, বরাহ, নৃসিংহ, বামন, বলরাম, পরশুরাম, রামচন্দ্র, বুদ্ধ ও কন্ধী, এই দশটি ভগবানের অবতার।” অনেকে হয় ত এ কথায় আপত্তি করিবেন, যেন দশাবতারের মধ্যে রামের নাম নির্দিষ্ট আছে, কিন্তু রাম যে ঈশ্বর, ইহারই বা প্রমাণ কি ? “রা শব্দে বিশ্ববচনে মশচাপীশ্বরবাচকঃ । বিশ্বানামীশ্বরো যো হি তেন রামঃ প্রকীৰ্ত্তিতঃ । পরিপূর্ণতমে। রামে ব্ৰহ্মশাপাৎ স্মৃতিস্মৃত ॥” ব্রহ্মবৈবৰ্ত্তপুরাণ। শ্ৰীকৃষ্ণজন্মখণ্ড। ১১৩।১১৬। তাৎপৰ্য্য—“রা শব্দের অর্থ বিশ্ব, ম শব্দের অর্থ ঈশ্বর । যিনি বিশ্বের ঈশ্বর, তিনিই রামনামে স্বপ্রখিত।” পদ্মপুরাণে বর্ণিত আছে,— “রামে দাশরঞ্চি; পূরে লক্ষণামুচরো বলী। কাকুৎস্থঃ পুরুষঃ পূর্ণঃ কৌশলেয়ে রঘুত্তমঃ।” তাৎপৰ্য্য,—“রামচন্দ্র দশরথের পুত্র, ইনি শৌৰ্য্য- , বীৰ্য্য-সম্পন্ন, লক্ষণ ইহার অনুবৰ্ত্তা, কৌশল্য-গর্ভে ইহার জন্ম, ইনি পূর্ণ পুরুষ।” অধ্যাত্মরামায়ণে লঙ্কাকাণ্ডের ১৫শ সর্গে শিবের উক্তিতে প্রকাশ যে— “ব্ৰহ্মাদয়স্তে ন বিদুঃ স্বরূপং চিদাত্মতত্ত্বং বহিরর্থভাবাঃ । ততো বুধম্বামিদমেবরূপং ভক্ত্য ভজম্মুক্তিমুপৈত্যদুঃখম।” তাৎপৰ্য্য,–“ব্ৰহ্মাদি দেবতাগণ তোমার আকৃতিমাত্র ভাবনা করিয়া প্রকৃত স্বরূপত্ব অবগত হইতে পারেন না, কিন্তু যখন ভক্তিপ্রভাবে তোমার স্বরূপত্ব উপলব্ধি হয়, তখন তাহারা মুখে মুক্তিপথ পাইয়া থাকেন।” রামায়ণ-টীকাকার সুক্ষদশী রামানুজ স্বকৃত টীকার মঙ্গলাচরণে নির্দেশ করিয়াছেন যে,-- “জয়তি রঘুবংশতিলক: কৌশল্যাহৃদয়নন্দনে রামঃ। দশবদননিধনকারী দাশরথিঃ পুণ্ডরীকাক্ষ । জিতং ভগবতা তেন হরিণা লোকধারিণী । অজেন বিশ্বরূপেণ নিগুণেন গুণাত্মনা।” তাৎপৰ্য্য,—“যে রামচন্দ্র রঘুবংশে জন্মগ্রহণ করিয়াছেন, যিনি জননী কৌশল্যার আনন্দবৰ্দ্ধন, যিনি দশরথের পুত্র, র্যাহার হস্তে দশানন-নিধন হইয়াছে, সেই কমললোচন রামের জয় হউক । লোকধারক সেই ভগবান হরি ত্ৰৈলোক্য আক্রমণপূর্বক অবস্থিতি করিতেছেন, তিনি নিগুৰ্ণ ও অজ হইলেও গুণাশ্রয়ে বিশ্বসংসারে ব্যাপ্ত রহিয়াছেন।” এইরূপ অগস্তাসংহিতাতে প্রকাশ আছে যে – “আবিরাসীৎ সকলয় কৌশল্যায়াং পরঃ পুমান।” স্থবিজ্ঞ পাঠক । এখানে “পরঃ পুমান” এই শব্দ-প্রয়োগের প্রতি একবার দৃষ্টিপাত করুন।