পাতা:বিক্রমপুর - তৃতীয় বর্ষ.pdf/১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বৈশাখ ১৩২২ ]
কেদারনাথ।

আকাশ অনেকটা পরিষ্কার, কয়েক দিন হইতে ক্রমাগত খুব ঝড় বৃষ্টি হইতেছিল, এ সময়ে এই দুর্গম পথে যাতায়াত বড়ই বিপজ্জনক। একেত পথ অতি ভীষণ, কোন রূপে একজন লোক হাঁটিয়া চলিতে পারে, তারপর যখন ‘ঝর ঝর বরষে জলদ ঘন নীর’ তখন যে পথের কি অবস্থা হয় তাহা আর বলিয়া বুঝাইবার নহে, কেহ যদি সে সুখ সম্ভোগ করিতে চান একবার সে পথে যাইতে পারেন। ঝড়ের সময় মেঘ ও বজ্রের প্রলয় নির্ঘোষে যখন বিরাট পর্ব্বত দেহ কম্পিত হইতে থাকে, আর বনরাজি ঘন আন্দোলিত হইতে থাকে এবং সাঁই সাঁই সোঁ সোঁ রবে নৃত্য করিতে করিতে বাতাস দৌড়ায় তখন প্রতি মুহুর্তে মনে হয় বুঝি এইখানেই এই বিজন পর্ব্বত-বক্ষেই জীবনের চির সমাধি হইবে।

 আমরা যে পথে চলিয়াছি, উহা ঠিক পাহাড়ের গা ঘেঁসিয়া আঁকিয়া বাঁকিয়া উর্দ্ধ দিকে অগ্রসর হইয়াছে। এক পাশে খুব উঁচু পাহাড়, বড় বড় শিলার স্তূপ। কোন কোন শিলাখণ্ড এইরূপ ভাবে অবস্থিত যে, সামান্য স্পর্শেই উহা আমাদের মস্তকোপরি পতিত হইয়া আমাদের কেদার দর্শন তখনই শেষ করিয়া দিবে বলিয়া ভয় হইতেছিল। সময়ে সময়ে ঐরূপ শিলা পতনে দুর্ঘটনা ও ঘটিয়া থাকে। অপরদিকে অতল স্পর্শ খাদ। পথ বড়ই ভীষণ। যদি ঝাম্পানওয়ালাদের একজনের ও একটু পা পিছ‌্লে যায়, তাহা হইলে আর রক্ষা নাই। শত সহস্র ফিট্ নিম্নে নিপতিত হইতে হইবে, হাড় ক’খানার অস্তিত্ব ও তখন থাকিবে কিনা সন্দেহ।

 খানিকটা পথ চলিয়া আসিয়া একটা অতি ভয়ানক স্থানে পৌছিলাম। পথের ঠিক্ মাঝ দিয়া একটা সুদীর্ঘ সুড়ঙ্গ বা ফাটল চলিয়া গিয়াছে, উহার উপর এক হাত চওড়া একখানা কাঠ ফেলা, ঐ কাঠ খানার উপর দিয়া আমাদের পার হইতে হইবে। কাঠখানা যে খুব মজবুত তাহাতে সন্দেহ নাই। তবু দূর হইতে উহা দেখিয়া আমার শরীর ভয়ে জড়সড় হইয়াছিল। সত্য কথা বলিতে কি আমি রীতিমত কাঁপিতে ছিলাম আর মনে মনে ভগবানের নাম স্মরণ করিতেছিলাম। সঙ্গের লোকজনেরা আমার মুখের ভাব দেখিয়াই ভয়ের কথা বেশ বুঝিতে পারিল। এখানে নানা জল্পনা-কল্পনায় খানিক সময় কাটিয়া গেল। কিন্তু কল্পনাত ঐ খানে আমার জন্য সুপ্রশস্ত লৌহ সেতু বাধিয়া দিতে পারে না, আর এত পুণ্য ও করি নাই যে, স্বর্গ হইতে কোন দূত আসিয়া