পাতা:বিক্রমপুর - তৃতীয় বর্ষ.pdf/১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিক্রমপুর।
[৩য়, বর্ষ ১ম সংখ্যা

আমাকে কোলে করিয়া এই স্থান পার করিয়া দিবে। ঐ কাষ্ঠ খণ্ডের উপর দিয়াই আমাকে এই খাদের অপর পারে যাইতে হইবে। আমি তখন চক্ষু বুঁজিয়া ঝাম্পানের উপর চুপ করিয়া বসিয়া রহিলাম। ঝাম্পানওয়ালারা বোধ হয় আমার অবস্থা বুঝিতে পারিয়া এমন সন্তর্পণে ঐ কাষ্ঠখণ্ডের উপর দিয়া আমাকে লইয়া গেল কখন যে, ঐ খাদ পার হইয়া গেলাম তাহা জানিতেও পারিলাম না। সহসা লোকজনের আনন্দ-ধ্বনিতে চক্ষু মেলিয়া চাহিয়া দেখিলাম, খাদ পার হইয়া আসিয়াছি। আর নয়ন সমক্ষে দূরে কেদারনাথজীর মন্দির তুষার-মণ্ডিত অত্যুচ্চ গিরি শৃঙ্গে শোভা পাইতেছে। এত দিনে এক অপূর্ব্ব সৌন্দর্য-জগৎ উন্মুক্ত হইল। আজ আকাশে মেঘ নাই, গাঢ় নীল গগন গায় সূর্য্যদেব সোণার কিরণ রাশি ঢালিয়া দিতেছেন। সাদা বরকে ঢাকা পাহাড়গুলি তপন কিরণে ঝল মল করিতেছে। সত্য সত্যই উহার সহিত ‘কাঞ্চন-কিরণ নহ-সমতুল’। বদরীনাথের পাহাড় হইতেও কেদারনাথের পাহাড়ের উচ্চতা অধিক। প্রায় এগার হাজার ছয় শত ফিট হইবে।

 কেদারনাথ হিন্দুর পবিত্র মহাতীর্থ, শৈবের পরম সাধনার স্থান। এখানে খুব বেশী শীত। আষাঢ় মাস, কিন্তু আমাদের দেশের মাঘ মাসের তীব্র কনকনে শীতের অপেক্ষা এখানকার শীত ভয়ানক। গায়ে প্রচুর পরিমাণে কাপড় চোপড় জড়াইয়াও শীতের হস্ত হইতে রক্ষা পাই নাই। পাহাড়ের পথে খানিক দূর যাইতে যাইতে শুনিলাম কে যেন অদূরে গায়িতেছে,

জয় প্রভু! কেদারনাথ উদয় চরণ তেরা ( অতি দরশন তেরা )

 কণ্ঠস্বর রমণী কণ্ঠের ন্যায় বোধ হইতেছিল। এই বিজন-পথে সুমধুর সুরের রাগিণী বড়ই মধুর লাগিতেছিল। পথের বাঁকটুকু ফিরিয়া দেখিলাম, একটা ক্ষুদ্র চটীর পাশে গাছের ছায়ায় বসিয়া একটী বাঙ্গালী যুবতী গান গাহিতেছে, আর একজন সন্ন্যাসী যুবক গানের সঙ্গে সঙ্গে ডমরু বাজাইতেছে, আর মাঝে মাঝে স্বীয় বাসভ-নিন্দিত কণ্ঠ মিলাইয়া গানের মাধুর্য্য বিনষ্ট করিতেছে। তাহারা গায়িতেছিল:

‘জয়ী প্রভু! কেদারনাথ উদয় চরণ তেরা ( অতি দরশন তেরা )।
রঞ্চণা তােমার রঞ্চিয়ে প্রভু! রঞ্চিলে যুগ চার॥
ধর্মা তোম্, বিষ্ণু তােম্, রাজ্য সৃষ্টিকে আধার।