পাতা:বিচিত্র গল্প দ্বিতীয় ভাগ - রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মুক্তির উপায়।
৫১

দুষ্কর হইয়া উঠে। ইহা ছাড়া কানের উপর উপদ্রবও ছিল; প্রথমতঃ মলিয়া, দ্বিতীয়তঃ এমন সকল ভাষা প্রয়োগ করিয়া যাহাতে কান না মলিলেও, কান লাল হইয়া উঠে।

 ইহার পর ফকিরকে তাহারা এমন সকল গান ফর‍্মায়েস্ করিতে লাগিল, আধুনিক বড় বড় নুতন পণ্ডিতেরা যাহার কোনরূপ আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করিতে হার মানেন। আবার নিদ্রাকালে তাহারা ফকিরের স্বল্পাবশিষ্ট গণ্ডস্থলে চুনকালী মাখাইয়া দিল, আহারকালে কেসুরের পরিবর্ত্তে কচু, ডাবের জলের পরিবর্ত্তে হুঁকার জল, দুধের পরিবর্ত্তে পিঠালি গোলার অয়োজন করিল, পিঁড়ার নীচে সুপারি রাখিয়া তাহাকে আছাড় খাওয়াইল, লেজ বানাইল এবং সহস্র প্রচলিত উপায়ে ফকিরের অভ্রভেদী গাম্ভীর্য্য ভূমিসাৎ করিয়া দিল।

 ফকির রাগিয়া ফুলিয়া ফাঁপিয়া ঝাঁকিয়া হাঁকিয়া কিছুতেই উপদ্রবকারীদের মনে ভীতির সঞ্চার করিতে পারিল না। কেবল সর্ব্বসাধারণের নিকট অধিকতর হাস্যাস্পদ হইতে লাগিল। ইহার উপরে আবার অন্তরাল হইতে একটি মিষ্ট কণ্ঠের উচ্চহাস্য মাঝে মাঝে কর্ণগোচর হইত; সেটা যেন পরিচিত বলিয়া ঠেকিত এবং মন দ্বিগুণ অধৈর্য্য হইয়া উঠিত।

 পরিচিত কণ্ঠ পাঠকের অপরিচিত নহে। এইটুকু বলিলেই যথেষ্ট হইবে যে, ষষ্ঠিচরণ কোন এক সম্পর্কে হৈমবতীর মামা। বিবাহের পর শাশুড়ির দ্বারা নিতান্ত নিপীড়িত