পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

R বিচিত্র-জগৎ কিন্তু গ্ৰীস-দেশের সাধারণ কৃষকশ্রেণীর লোকেও তার স্বপ্ন ভেঙে দেবে না, যদি অতীতের স্বপ্ন-মাখিানো চোখে কোন ভ্রমণকারী আধুনিক গ্ৰীসে বেড়াতে এসে আক্রোপোলিসের ধ্বংসস্তুপে “অশ্বারোহী চতুষ্টয়’এর অনুসন্ধান করে-বরং যা সে খুঁজতে এসেছিল, তার চেয়ে ভাল কোনো জিনিস সে দেখবে এদের মধ্যে। তুরস্কের অধীনতাপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করবার একশত বছরের মধ্যে গ্ৰীস সকল বিষয়ে অসাধারণ উন্নতি করেছে। নবীন গ্ৰীস অত্যন্ত উন্নতিশীল, পুরাতনের সঙ্গে তার বিশেষ কোনো যোগ নেই-নবীন গ্রীসের আদর্শ মার্কিন যুক্তরাজ্য। ছাত্রেরা এখান থেকে পড়তে যায় আমেরিকায়। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য-সম্পর্কও খুব ঘনিষ্ঠআমেরিকা গ্ৰীসের তামাক, ফল ও কাপেট কেনে—গ্ৰীস আমেরিকার নিকট প্রতি বৎসর ২.৫ কোটি ডলারের মাল CFC V tr " আমরা আকাশ-পথে প্ৰথম গ্ৰীস ভ্রমণে যাই । ব্রিন্দিসিতে যে স্তম্ভটি প্রাচীন যুগের রোমান পথ “এপিয়ান ওয়ে’র শেষ সীমা জ্ঞাপন করছে, আমাদের ভ্ৰমণ সুরু হয়েছিল। সেখান থেকে-উর্বর অথচ ম্যালেরিয়াসস্কুল ইটালির জলাভূমির ওপর দিয়ে আমরা গেলাম। ওটাণ্টো পৰ্য্যন্ত, পার হয়ে গেলাম কফুর্টতে, পর্বতময় কফুর পশ্চিমতীর প্রদক্ষিণ করে এবং 'ইউলিসিসের জাহাজ’ নামে অতি সুন্দর ছোট দ্বীপটিার মাথার ওপর দিয়ে উড়ে আমরা কফুর্সািহরের প্রাচীন দুর্গের অনতিদূরে মাটীতে নােমলাম। জলপাই-বাগানে ও সাইপ্রেসকফুর্ণ ওডিসিউসের জাহাজ কুঞ্জে সুসজিত এই ক্ষুদ্র দ্বীপটি প্ৰাকৃতিক সৌন্দৰ্য্যের জন্যে পৃথিবীর মধ্যে প্ৰসিদ্ধ। অষ্ট্রিয়ার সাম্রাজ্ঞী এলিজাবেথ এখানে অবসর সময় অতিবাহিত করতেন, ট্রয়যুদ্ধের সুন্দরতম বীরপুরুষ একিলিসের নামে এই আবাসস্থানের নাম রেখেছিলেন একিলিয়ন। সমুদ্রতীরের বাগান যেখানে ঢালু হয়ে জলের দিকে নেমে গিয়েছে—সেখানে জাৰ্ম্মান কবি হাইনের মৰ্ম্মর মূৰ্ত্তি স্থাপিত ছিল-এলিজাবেথের মৃত্যুর পরে কাইজার বাড়ীটা কিনে নিয়ে সর্বপ্রথমেই এই মূৰ্ত্তিটা অপসারিত করেন। তখনকার দিনে জাৰ্ম্মান • সম্রাটের প্রমোদতরী প্ৰায়ই কৰ্কদ্বীপে আসত। ওপরে একটা ঘরে এই ভূতপূৰ্ব সম্রাট টেবিলে বসে লেখাপড়া করতেন। একিলিয়ন প্রাসাদ-ঘরে যুদ্ধের হাসপাতাল হয়েছিল, যুদ্ধের অবসান দিনকতক অনাথাশ্রমও হয়েছিল—এখন তার যেমন অবস্থা বোধ হয়। শীঘ্ৰ জুয়ার আডিডায় পরিণত হবে । কফুর্ট থেকে আমরা উড়ে গেলাম ইণাকাতে। আমাদের বা দিকে দিগন্তবিস্তৃত ম্যালেরিয়াসকুল জলাভূমি। দক্ষিণে আতা উপসাগরের বালুময় তীরে অক্টেভিয়ানের স্থাপিত নগরীর ধ্বংসাবশেষ। একস্থানে নেমে আমরা ফোটাে তুলবাের যোগাড় করছি, একজন সামরিক কৰ্ম্মচারী এসে নিষেধ করলে।