S 62byr বিচিত্ৰ-জগৎ এর পরে বাটাভিয়ার লোকে নিকটবৰ্ত্তী উচ্চস্থানে তাদের সহর নিৰ্ম্মাণ করে। এই সহরের জল-হাওয়া স্বাস্থ্যকর, এখানে বড় বড় চওড়া রাজপথ ও সুসজ্জিত পার্ক আছে, বাটাভিয়ার সহরের এই অংশের নাম “ভেলটীত্ৰিডেন” । পুরানো বাটাভিয়া সহরে ব্যবসা-বাণিজ্যের অফিস ও গুদামগুলি আছে বটে। কিন্তু নূতন বাড়ী, ব্রাঞ্চ-অফিস ও ধনী লোকের বসতি এই অংশে। পুরানো বাটাভিয়া সহরে বড় বড় পাথরের ব্যাঙ্ক ও অফিসের বাড়ীগুলির পাশে চীনাপল্পী। প্ৰশস্ত রাজপথে আমেরিকান মটরগাড়ীগুলি ছুটাছুটি করে এবং জর্জ ষ্টিফেনসনের প্রাচীন ঐতিহাসিক এঞ্জিন “রিকেট”-এর অনুরূপ একখানি ষ্টীমটাম প্ৰাচীন ও নবীন সহরদুটিকে সংযুক্ত করছে। সমস্ত দুনিয়ার সঙ্গে বাটাভিয়ার কারবার, কিন্তু আশ্চর্য্যের বিষয় এই যে, দুপুর বেলা কোন কাজকৰ্ম্ম হয় না, বড় বড় অফিস ও ব্যাঙ্কগুলি নিস্তব্ধ ও নীবাব, কারণ বাটাভিয়ার লোকে এই সময় দিবানিদ্রা উপভোগ করে থাকে। বাটাভিয়া থেকে জাহাজ ছেড়ে আমরা চীনের উত্তর উপকূল বেয়ে সুরাবায়া যাত্রা করলাম, পথে জন কয়েক আরোহী নামিয়ে দেবার জন্য সামরাং বন্দরে একটু দাঁড়াতে হল। সামরাং বড় সহর হলেও সামুদ্রিক বাণিজ্যে ও লোকসংখ্যায় বাটাভিয়ার তুলনায় কিছুই নয়। সামারাং বাজারের বর্ণ-বৈচিত্ৰ্য আমাকে মুগ্ধ করলে যে, আমি ক্রয়বিক্ৰয়রত শুষ্ঠামাঙ্গিনী বালিকাদের ও কয়েকটী লোলচৰ্ম্ম বৃদ্ধর ফটো নেবার চেষ্টা করলাম। ফলে কিন্তু কিছুই উঠল না, কারণ মেয়েরা সবাই এদিকে ওদিকে পালিয়ে গেল, কিম্বা দুহাত দিয়ে মুখ ঢাকিল। সুরাবায়া বন্দরে আসবার কিছু পূর্বে প্ৰভাতের উজ্জ্বল সূৰ্য্যালোকে আমরা দুরে নীলবৰ্ণ টেনগার পর্বতশ্রেণী এবং দক্ষিণ দিকে কুয়াসাচ্ছন্ন আরডেনে আগ্নেয়গিরি দেখতে পেলাম। সুরাবায়া জাহাজ মেরামতের একটা বড় আড়া, সিঙ্গাপুর ছাড়া ডাচ ইষ্ট ইণ্ডিজের মধ্যে এত বড় জাহাজ নিৰ্ম্মাণের স্থান আর নেই, কিন্তু আমি যে জন্য গিয়েছিলাম, সে উদ্দেশ্য সফল হ’ল না। আধুনিক সুৱাবায়া সহর একটী ছোটখাটাে আমেরিকান সইরের অনুরূপ। সৰ্ব্বত্র সেই ধরণেরই চওড়া রান্তা, রেডিও ও মটর গাড়ীর দোকান, প্রাসাদোপম বড় বড় বাড়ী, রাস্তার মাঝে ফোয়ারা ও বিখ্যাত নাগরিকদের প্রস্তরমূৰ্ত্তি। . এখানে আমরা আমাদের হোটেলের বারান্দায় বসে একদিন আলোচনা করছিলাম যে, আমরা অগ্নিবী ব্রোমে। পূৰ্ব্বত দেখতে যাব কি না। জনৈক মার্কিন ব্যবসায়ী বললেন, আমি সেখানে কখন যাইনি বটে, কিন্তু সেখানে দেখার উপযুক্ত কিছু পাব কি না বুঝতে পাব্লিছনে। আমি বার্গলাম, কিন্তু ব্রোমে-পৰ্ব্বত দেখবার পরামর্শ সকলে দিয়েছে। সে বললে, এ দেশের লোকের কথায় বিশ্বাস নেই। একবার একজন ডাচম্যান আমাকে সারা দুপুর হাটিয়ে নিয়ে গিয়েছিল মাত্র দশ ফিট উঁচু একটী জলপ্রপাত দেখবার জন্য। তা সত্ত্বেও আমরা গেলাম। ট্রেনে এক ঘণ্টার পথ পাসংগ্ৰান, সেখান থেকে মটরে চব্বিশ মাইল, দু'হাজার ফুট উঁচু পর্বতগাত্রে আঁকা বঁকা দুৰ্গম ও বিপজ্জনক পথ বেয়ে দীর্ঘ দীর্ঘ ঝাউগাছের জঙ্গল ভেদ করে আমরা মেঘ ও কুয়াসাবৃত তোসারী নামক ক্ষুদ্র শৈল নগরীতে এসে পৌঁছলাম। বিকেল কেটে গেল, কুয়াসা থেকে বৃষ্টি করতে সুরু করলে। মোটা কোটি গায়ে থাকা সত্ত্বেও আমি হি হি করে কাপতে সুরু করলাম। একটা ছোট হোটেলে আশ্ৰয় নেওয়া গিয়েছিল। রাত তিনটার সময় দূরস্থ ব্রোমে। আগ্নেয় পৰ্ব্বতের উপর সুৰ্য্যোদয় দেখবার আশায় শয্যাত্যাগ করে উঠে দেখি যে, ঘন কুয়াসায় দিগদিগন্ত আচ্ছন্ন হয়েছে। দুটি চোদ্দ বছরের ছেলে আমার পথ-প্ৰদৰ্শক রূপে অপেক্ষা করছিল, তারা ভারী কম্বলে কচ্ছপের মত আপাদমস্তক মুড়ি দিয়ে দাড়িয়ে আছে । ব্রোমে আগ্নেয়গিরি দেখতে যাবার পথ যেমন দুৰ্গম, তেমনি সুদীর্ঘ। পথও শেষ হয় না, পথের কিছু দেখাও যায় না। মাঝে মাঝে পাহাড়ের উচ্চস্থান পার হবার সময় কুয়াসমিশ্ৰিত শীতের বাতাসে যেন শরীরের রক্ত জমে যাচ্ছে।
পাতা:বিচিত্র জগৎ - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/১৬৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
![](http://upload.wikimedia.org/wikisource/bn/thumb/e/e9/%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A6%97%E0%A7%8E_-_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%B7%E0%A6%A3_%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC.pdf/page167-1024px-%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%9A%E0%A6%BF%E0%A6%A4%E0%A7%8D%E0%A6%B0_%E0%A6%9C%E0%A6%97%E0%A7%8E_-_%E0%A6%AC%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%A4%E0%A6%BF%E0%A6%AD%E0%A7%82%E0%A6%B7%E0%A6%A3_%E0%A6%AC%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A6%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A7%8B%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A7%E0%A7%8D%E0%A6%AF%E0%A6%BE%E0%A6%AF%E0%A6%BC.pdf.jpg)