পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১০২

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৮৮
বিচিত্র প্রবন্ধ

নির্ণয় করিবার ভার আমি লইব না। একটা সিদ্ধান্তকে শেষ পর্য্যন্ত মিলাইয়া দিব পণ করিলে বিস্তর মিথ্যা বলিতে হয়। বলিতে রাজি আছি; কিন্তু এত পরিশ্রম আজ পারিব না।

 আজ, পড়িয়া-পড়িয়া, সমুখে চাহিয়া-চাহিয়া যেটুকু সহজে মনে আসিতেছে, সেইটুকুই লিখিতে বসিয়াছি।

 দীর্ঘ শীতের পর আজ মধ্যাহ্নে প্রান্তরের মধ্যে নববসন্ত নিশ্বসিত হইয়া উঠিতেই নিজের মধ্যে মনুষ্যজীবনের ভারি একটা অসামঞ্জস্য অনুভব করিতেছি। বিপুলের সহিত, সমগ্রের সহিত তাহার সুর মিলিতেছে না। শীতকালে আমার উপরে পৃথিবীর যে সমস্ত তাগিদ্‌ ছিল, আজও ঠিক সেই সব তাগিদ্‌ই চলিতেছে। ঋতু বিচিত্র, কিন্তু কাজ সেই একই। মনটাকে ঋতুপরিবরর্ত্তনের উপরে জয়ী করিয়া তাহাকে অসাড় করিয়া যেন মস্ত একটা কী বাহাদুরী আছে! মন মস্ত লোক—সে কী না পারে! সে দক্ষিণে হাওয়াকেও সম্পূর্ণ অগ্রাহ। করিয়া হনহন করিয়া বড়োবাজারে ছুটিয়া চলিয়া যাইতে পারে! পারে স্বীকার করিলাম, কিন্তু তাই বলিয়াই কি সেটা তাহাকে করিতেই হইবে! তাহাতে দক্ষিণে বাতাস বাসায় গিয়া মরিয়া থাকিবে না, কিন্তু ক্ষতিটা কাহার হইবে?

 এই তো অল্পদিন হইল, আমাদের আমলকী-মউল ও শালের ডাল হইতে খস্‌খস্‌ করিয়া কেবলি পাতা খসিয়া পড়িতেছিল—ফাল্গুন দূরাগত পথিকের মতো যেম্‌নি দ্বারের কাছে আসিয়া একটা হাঁপ ছাড়িয়া বসিয়াছে মাত্র, অম্‌নি আমাদের বনশ্রেণী পাতাখসানোর কাজ বন্ধ করিয়া দিয়া একেবারে রাতারাতিই কিসলয় গজাইতে সুরু করিয়া দিয়াছে।

 আমরা মানুষ, আমাদের সেটি হইবার জো নাই। বাহিরে চারিদিকেই যখন হাওয়া বদল, পাতা বদল, রং বদল, আমরা তখনও