পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৫৭

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
চিঠির টুক্‌রি
১৪৩

চিঠির টুক্‌রি

শান্তিনিকেতন
১৯ চৈত্র, ১৩৩২


 সেই পাগল কবি বেচারা দিন তিনেক এখানে ছিল। কথায়বার্ত্তায় হঠাৎ তাকে পাগল ব’লে চেনা যায় না। একটুখানির জন্যে ওর তার ছিঁড়ে গেছে অথচ হয়তো ওর যন্ত্রটি ভালো ক’রেই গড়া ছিল। আমাদের সকলের মধ্যেই একটা পাগল আছে, সে আমাদের সব দেখা ও ভাবার মধ্যে নিজের খেয়ালী রং মিশিয়ে দেয়, আমাদের ছবির মধ্যে নিজের তুলি বুলোয়, আমাদের গানের মধ্যে নিজের সুর লাগিয়ে বসে। ফলের মধ্যে আঁঠির কর্ত্তা হচ্চেন জ্ঞানী, তিনি তাকে পাকা রকমে পাহারা দেন, আর ফলের মধ্যেকার পাগল ব’সে ব’সে খামকা তার খোসার উপর রং মাখায়, যে-খোসা ফেলে দিতে হবে; তার শাঁসের মধ্যে রসের সাধনা করে যে-শাঁস দুদিনে যাবে নষ্ট হয়ে; তাতে পাগলের খেয়াল নেই। যে-পাগলের তুলি রং দিতে গিয়ে খোঁচা দিয়ে বসে, তাকে নিয়েই বিপদ। জীবনের মধ্যে পাগলের খোঁচা সম্পূর্ণ এড়ানো চলে না—এড়াতে পারলে বেশ ঠাণ্ডা হয়ে দিনে ঘুমিয়ে তাসপাশা খেলে নিরাপদভাবে সংসারযাত্রা ক’রে নাতিনাৎনীর মুখ দেখে কোম্পানীর কাগজ জমিয়ে আয়ুটিকে বায়ুর ধাক্কা থেকে বাঁচিয়ে চলা যেতে পারত। সে আর হয়ে উঠল না।