পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৬

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮২
বিচিত্র প্রবন্ধ
শান্তিনিকেতন
২৫চৈত্র, ১৩৪১

 মনে পড়ছে সেই শিলাইদহের কুঠি, তেতালার নিভৃত ঘরটি—আমের -বোলের গন্ধ আসছে বাতাসে—পশ্চিমের মাঠ পেরিয়ে বহুদুরে দেখা যাচ্চে বালুচরের রেখা, আর গুণটানা মাস্তুল। দিনগুলো অবকাশেভরা—সেই অবকাশের উপর প্রজাপতির ঝাঁকের মতো উড়ে বেড়াচ্চে রঙীন পাখাওয়ালা কত ভাবনা এবং কত বাণী। কর্ম্মের দায়ও ছিল তারি সঙ্গে—আর হয়তো মনের গভীরে ছিল অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা, পরিচয়হীন বেদনা। সব নিয়ে ছিল যে আমার নিভৃত বিশ্ব সে আজ চলে গিয়েছে বহুদূরে। এই বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে ছিল আমার পরিণত যৌবন—কোনো ভারই তার কাছে ভার ছিল না—নদী যেমন আপন স্রোতের বেগেই আপনাকে সহজে নিয়ে চলে, সেও তেমনি আপনার ব্যক্ত অব্যক্ত সমস্ত কিছুকে নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে চলেছিল—যে ভবিষ্যৎ ছিল অশেষের দিকে অভাবনীয়। এখন আমার ভবিষ্যৎ এসেছে সঙ্কীর্ণ হয়ে। তার প্রধান কারণ, যে-লক্ষ্যগুলো এখন আমার দিনরাত্রির প্রয়াসগুলিকে অধিকার করেছে তারা অত্যন্ত সুনির্দ্দিষ্ট। তার মধ্যে অচরিতার্থ অসম্পূর্ণ আছে অনেক কিন্তু অপ্রত্যাশিত নেই। এইটেতেই বোঝ যায় যৌবন দেউলে হয়েছে কেননা যৌবনের প্রধান সম্পদ হচ্চে অকৃপণ ভাগ্যের অভাবনীয়। তখন সামনেকার যে অজানা ক্ষেত্রের ম্যাপ আঁকা বাকি ছিল, মাইলপোষ্ট বসানো হয়নি সেখানে, সম্ভবপরতার ফর্দ্দ তলায় এসে ঠেকেনি। আমার শিলাইদহের কুঠি পদ্মার চর সেখানকার দিগন্তবিস্তৃত ফসলক্ষেত ও ছায়ানিভৃত গ্রাম ছিল সেই অভাবনীয়কে নিয়ে যার মধ্যে আমার কল্পনার ডানা বাধা পায়নি। যখন শান্তিনিকেতনে