পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৮

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
১৮৪
বিচিত্র প্রবন্ধ
শান্তিনিকেতন
২৩ বৈশাখ, ১৩৪২

 বয়স যখন অল্প ছিল জন্মদিনের প্রভাতে ঘুম থেকে উঠতেই নানা লোকের কাছ থেকে নানা উপহার এসে পৌঁছত। তুমি যেমন ক’রে বাজার ঘুরেছ তেমনি ক’রেই তারা, যারা আমার জন্মোৎসবে খুচি হোত এবং আমাকে খুসি করতে চাইত, দোকানে দোকানে এমন কিছুর সন্ধান করত যা দেখে আমার চমক লাগ্‌তে পারে। অপ্রত্যাশিত বই ছবি কাপড় শিল্পদ্রব্য, আর তার সঙ্গে সঙ্গে ফলফুলের ঝুড়ি। তখন জীবনে প্রভাতের আকাশ ছিল উজ্জ্বল স্নিগ্ধ স্বচ্ছ, মন ছিল সুকুমার সরস, সব কিছুতেই ছিল তার ঔৎসুক্য, স্নেহের ছোঁওয়া লাগলেই বেজে উঠত মননযন্ত্রের তার—তখন জন্মদিনগুলি সমস্ত দিনই গুঞ্জরিত হয়ে থাকত, তার রেশ যেন থামতে চাইত না। তার একটা কারণ, তখনকার পৃথিবী প্রায় ছিল আমার সমবয়সী, পরস্পর এক সমতলে বইত হৃদয়ের আদানপ্রদানের প্রবাহ, জন্মের অধিকাংশই ছিল সামনের দিকে অনুদঘাটিত, মন তখন মৌমাছির মতো হাওয়ায় ঘুরে বেড়াত সম্ভাব্যতার প্রত্যাশায়, অনাঘ্রাত পুষ্পের সৌরভে। এখনকার জন্মদিন তো কাঁচা নয়, কচি নয়, মন তার সকল প্রত্যাশার শেষে এসে পৌঁচেছে। অজানা পথে চলতে চলতে ভাগ্যের হাতে হঠাৎ অভাবনীয় দান পেয়ে অধীর হয়ে উঠব এই ছিল তখনকার আকাশবাণীতে, তখনকার জন্মদিনের অভাবিতপূর্ব্ব উপহারগুলিও এই বাণী বহন করত। তখনকার সেই জন্মদিনের ধারা এখন আর নেই। কিন্তু উৎসর্গ যে আসে না তা নয়—কিন্তু সে আসে দূরের দান পায়ের কাছে, কণ্ঠে আসে না হাতে আসে না—উপহার আসে না। অঞ্জলি থেকে অঞ্জলিতে। দেবতারা কি খুসি হন তাঁদের