পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪০

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
২৬
বিচিত্র প্রবন্ধ

ঘেঁসাঘেঁসি, গোলমাল, গাড়ি ঘোড়া, ধূলো কাদা, মাছি মশা, এ সকলের প্রাদুর্ভাব বড়ো নাই। মাঠ পাহাড় গাছপালার মধ্যে সহরটি তক্‌তক্ করিতেছে।

 একদিন কাটিয়া গেল। এখন দুপুরবেলা। ডাকবাংলার বারান্দার সন্মুখে কেদারায় এক্‌লা চুপ করিয়া বসিয়া আছি। আকাশ সুনীল। দুই খণ্ড শীর্ণ মেঘ শাদা পাল তুলিয়া চলিয়াছে। অল্প অল্প বাতাস আসিতেছে। একরকম মেঠো মেঠো ঘেসো ঘেসো গন্ধ পাওয়া যাইতেছে। বারান্দার চালের উপর একটা কাঠবিড়ালি। দুইটা শালিখ বারান্দায় আসিয়া চকিতভাবে পুচ্ছ নাচাইয়া লাফাইতেছে। পাশের রাস্তা দিয়া গরু লইয়া যাইতেছে তাহাদের গলার ঘণ্টার ঠুং ঠুং শব্দ শুনিতেছি। লোকজনের কেউ ছাতা মাথায় দিয়া কেউ কাঁধে মোট লইয়া কেউ দুয়েকটা গরু তাড়াইয়া, কেউ একটা ছোটো টাট্টুর উপর চড়িয়া রাস্তা দিয়া অতি ধীরেসুস্থে চলিতেছে; কোলাহল নাই, ব্যস্ততা নাই, মুখে ভাবনার চিহ্ন নাই। দেখিলে মনে হয় এখানকার মানবজীবন দ্রুত এঞ্জিনের মধ্যে হাঁসফাঁস করিয়া অথবা গুরুভারাক্রান্ত গরুর গাড়ির চাকার মতো আর্ত্তনাদ করিতে করিতে চলিতেছে না। গাছের তলা দিয়া দিয়া একটুখানি শীতল নির্ঝর যেমন ছায়ায় ছায়ায় কুল্‌কুল্‌ করিয়া যায়, জীবন তেমনি করিয়া যাইতেছে। সন্মুখে ঐ আদালত। কিন্তু এখানকার আদালতও তেমন কঠোরমূর্ত্তি নয়। ভিতরে যখন উকিলে উকিলে শামলায় শামলায় লড়াই বাধিয়াছে তখন বাহিরের অশথগাছ হইতে দুই পাপিয়ার অবিশ্রাম উত্তর প্রত্যুত্তর চলিতেছে। বিচারপ্রার্থী লোকেরা আমগাছের ছায়ায় বসিয়া জটলা করিয়া হাহা করিয়া হাসিতেছে, এখান হইতে শুনিতে পাইতেছি। মাঝে মাঝে আদালত হইতে মধ্যাহ্নের ঘণ্টা বাজিতেছে। চারিদিকে যখন জীবনের মৃদুমন্দ গতি, তখন এই ঘণ্টার শব্দ শুনিলে টের পাওয়া যায় যে