পাতা:বিচিত্র প্রবন্ধ-রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৪৪

এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৩০
বিচিত্র প্রবন্ধ

ইহার বাতায়নের মধ্যে দিয়া চিরদিন যাতায়াত করিতে থাকিবে। সমস্ত জগতের সহিত ইহার যোগ হইয়া যাইবে।

 ১২৯২


পথপ্রান্তে

আমি পথের ধারে বসিয়া লিখি, তাই কী লিখি ভাবিয়া পাই না।

 ছায়াময় পথ। প্রান্তে আমার ক্ষুদ্র গৃহ। তাহার বাতায়ন উন্মুক্ত। ভোরর বেলায় সূর্য্যের প্রথম কিরণ অশোকৃশাখার কম্পমান ছায়ার সঙ্গে আমার সম্মুখে আসিয়া দাঁড়ায়, আমাকে দেখে, আমার কোলের উপর পড়িয়া খেলা করে, আমার লেখার উপর আসিয়া পড়ে, এবং যখন চলিয়া যায় তখন লেখার উপরে খানিকটা সোনালি রঙ রাখিয়া দিয়া যায়, আমার লেখার উপরে তাহার কনক চুম্বনের চিহ্ন থাকিয়া যায়। আমার লেখার চারিধারে প্রভাত ফুটিয়া উঠে। মাঠের ফুল, মেঘের রং, ভোরের বাতাস এবং একটুখানি ঘুমের ঘোর আমার পাতার মধ্যে মিশাইয়া থাকে, অরুণের প্রেম আমার অক্ষরগুলির চারিদিকে লইয়া উঠে।

 আমার সমুখ দিয়া কত লোক আসে কত লোক যায়। প্রভাতের আলো তাহাদের আশীর্ব্বাদ করিতেছে, স্নেহভরে বলিতেছে তোমাদের যাত্রা শুভ হউক, পাখীরা কল্যাণগান করিতেছে, পথের আশেপাশে ফুট’-ফুট’ ফুলেরা আশার মতো ফুটিয়া উঠিতেছে। যাত্রা আরম্ভের সময়ে সকলে বলিতেছে ভয় নাই, ভয় নাই। প্রভাতে সমস্ত বিশ্বজগৎ শুভযাত্রার গান গাহিতেছে। অনন্ত নীলিমার উপর দিয়া সূর্যের