চলিয়া গেল। এক বৎসর দুই বৎসর করিয়া ক্রমে বারো বৎসর হইয়া যায়, তবু রাজার আর দেখা নাই।
এদিকে রাজকন্যা ষোড়শী হইয়া উঠিয়াছে। বিবাহের বয়স উত্তীর্ণ হইয়া গেল। কিন্তু রাজা ফিরিল না।
মেয়ের মুখের দিকে চায়, আর রাণীর মুখে অন্নজল রুচে না। আহা, আমার এমন সোনার মেয়ে কি চিরকাল আইবড়ো থাকিবে? ওগো আমি কী কপাল করিয়াছিলাম!
অবশেষে রাণী রাজাকে অনেক অনুনয় করিয়া বলিয়া পাঠাইলেন, আমি আর কিছু চাহি না, তুমি একদিন কেবল আমার ঘরে আসিয়া খাইয়া যাও।
রাজা বলিলেন, আচ্ছা।
রাণী তত সেদিন বহুযত্নে চৌষট্টি ব্যঞ্জন স্বহস্তে রাধিলেন এবং সমস্ত সোনার থালে ও রূপার বাটিতে সাজাইয়া চন্দন কাঠের পিঁড়ি পাতিয়া দিলেন! রাজকন্যা চামর হাতে করিয়া দাঁড়াইলেন।
রাজা আজ বারো বৎসর পরে অন্তঃপুরে ফিরিয়া আসিয়া খাইতে বসিলেন। রাজকন্যা রূপে আলো করিয়া দাঁড়াইয়া চামর করিতে লাগিলেন।
মেয়ের মুখের দিকে চায় আর খাওয়া হয় না। শেষে রাণীর দিকে চাহিয়া তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন, হাঁ গো রাণী, এমন সোনার প্রতিমা লক্ষ্মী-ঠাকুরুণটির মতো এ মেয়েটি কে গা? এ কাহাদের মেয়ে?
রাণী কপালে করাঘাত করিয়া কহিলেন, হা আমার পোড়া কপাল! উহাকে চিনিতে পারিলে না? ও যে তোমারি মেয়ে।
রাজা বড়ো আশ্চর্য্য হইয়া বলিলেন—আমার সেই সেদিনকার এতটুকু মেয়ে আজ এত বড়োটি হইয়াছে?