পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১১৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
১০৬

‘পাহারা’ আছে, কিন্তু অনেকে তাতে তুষ্ট নন, সংস্কৃত মনে করে ‘চলমান’ আর ‘প্রহরা’ লেখেন। যখন শোনেন যে সংস্কৃত নয় তখন বলেন, বাংলা স্বাধীন ভাষা, সংস্কৃতের দাসী নয়; চলমান আর প্রহরা শ্রুতিমধুর, অতএব চলবে। ‘কার্যকরী’ স্ত্রীলিঙ্গ, কিন্তু বোধ হয় সুমিষ্ট, তাই ‘কার্যকরী উপায়, কার্যকরী প্রস্তাব’ ইত্যাদি অপপ্রয়োগ আজকাল খবরের কাগজে খুব দেখা যায়।

 ‘কর্মসূত্রে’ স্থানে ‘কর্মব্যপদেশে’, ‘ধূমজাল’ স্থানে ‘ধূম্রজাল’, ‘শয়িত বা শয়ান’ স্থানে ‘শায়িত’, ‘প্রসার’ স্থানে ‘প্রসারতা’, কৌশল বা পদ্ধতি অর্থে ‘আঙ্গিক’, প্রামাণিক অর্থে ‘প্রামাণ্য’, ক্ষীণ বা মিটমিটে অর্থে ‘স্তিমিত’ ইত্যাদি অশুদ্ধ প্রয়োগ আধুনিক রচনায় প্রচুর দেখা যায়। এই সব শব্দের বদলে শুদ্ধ শব্দ লিখলে রচনার মিষ্টত্বের লেশমাত্র হানি হয় না। ভাষার শুদ্ধিরক্ষার জন্য সতর্কতা আবশ্যক―এ কথা শুনলে নিরঙ্কুশ লেখকরা খুশী হন না। তাঁদের মনোভাব বোধ হয় এই।―যা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে এবং আর পাঁচজনেও যা লিখছে তা অশুদ্ধ হলেও মেনে নিতে হবে। আমি যদি গলা-ধাক্কা অর্থে গলাধঃকরণ লিখে ফেলি এবং আমার দেখাদেখি অন্যেও তা লিখতে আরম্ভ করে তবে সেই নূতন অর্থই মানতে হবে।

ইংরেজীর প্রভাব

 ইংরেজী অতি সমৃদ্ধ ভাষা। মাতৃভাষার অভাব পূরণের জন্য সাবধানে ইংরেজী থেকে শব্দ আর ভাব আহরণ করলে কোনও অনিষ্ট হবে না। কিন্তু যা আমাদের আছে তাকে অবহেলা করে যদি বিদেশী শব্দ বা বাক্যের নকল চালানো হয়, তবে অনর্থক দৈন্য প্রকাশ পাবে এবং মাতৃভাষা বিকৃত হবে। medium-এর প্রতিশব্দ ‘মাধ্যম’-এর প্রয়োজন আছে, যথাস্থানে তার প্রয়োগ সার্থক। কিন্তু