পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১১৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১০৭
বাংলা ভাষার গতি

ইংরেজী বাক্যরীতির অনুকরণে লেখা হয়—‘বাংলা ভাষার মাধ্যমে বিজ্ঞানশিক্ষা।’ ‘বাংলায় বিজ্ঞানশিক্ষা’ লিখলে হানি কি? সম্প্রতি দেখেছি—‘এই সভায় অনেক ব্যক্তিতার সমাগম হয়েছিল।’ ইংরেজী personality-এর আক্ষরিক অনুবাদ না করে ‘বিশিষ্ট ব্যক্তির সমাগম’ লিখলে কি চলত না? promise আর signature-এর বিশেষ অর্থে ‘প্রতিশ্রুতি’ আর ‘স্বাক্ষর’-এর অপপ্রয়োগ আজকাল খুব দেখা যায়।—‘নারীমাত্রেই মাতৃত্বের প্রতিশ্রুতি সম্পন্ন।’ ‘এই গ্রন্থে তাঁর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।’ একজনের লেখায় দেখেছি—‘সে এই অপমানের বিজ্ঞপ্তি নিল না’ (অর্থাৎ took no notice)। এই রকম অন্ধ অনুকরণ যদি চলতে থাকে তবে বাংলা ভাষা শীঘ্রই একটা উৎকট সংকর ভাষায় পরিণত হবে।

উচ্ছ্বাস ও আড়ম্বর

 নীরদ চৌধুরীর বহু বিতর্কিত ইংরেজী বইএ এই রকম একটা কথা আছে—বাঙালী বিনা আড়ম্বরে কিছু লিখতে পারে না। যুদ্ধ বেধেছে, এই সোজা কথার বদলে লিখবে—রুদ্র তাঁর প্রলয়নাচন নাচতে আরম্ভ করেছেন। চৌধুরী মহাশয় কিছু অত্যুক্তি করেছেন, কিন্তু তাঁর অভিযোগ একেবারে ভিত্তিহীন নয়। বাংলা কাগজে আগুন লাগা বা অগ্নিকাণ্ডর খবর লেখা হয়—বৈশ্বানরের তাণ্ডবলীলা। জলে ডুবি বা জলমজ্জনকে বলা হয় সলিল-সমাধি। ‘ব্যর্থ হইল’ লিখলে যথেষ্ট হয় না, লেখা হয়—‘ব্যর্থতায় পর্যবসিত হইল।’ বাংলাভাষী স্থানে লেখা হয় ‘বাংলাভাষাভাষী।’ সরল ভাষায় বক্তব্য প্রকাশ করতে অনেকে পারেন না।

 বিজ্ঞানদর্শনাদির আলোচনায় উচ্ছ্বসিত ভাষা অনর্থকর। বক্তব্য সহজে বোঝা যাবে মনে করে অনেকে অতিরিক্ত রূপক বা কাব্যিক