পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১২৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
১১৮

শুধু দেহচর্চা বা বিদ্যাচর্চা নিয়ে থাকেন তিনিও ধর্মের অংশমাত্র চর্চা করেন। বৈরাগ্যসাধনে মুক্তি সকলের জন্য নয়, প্রত্যেকে নিজের রুচি আর প্রবৃত্তি অনুসারেই ধর্মাচরণ করতে পারে এবং তাতেই সিদ্ধিলাভ করে ধন্য হতে পারে। কিন্তু জনসাধারণ যদি কেবল বাহ্য অনুষ্ঠান পালন করে এবং ধর্মের অন্যান্য অঙ্গ উপেক্ষা করে কেবল ভক্তির চর্চা করে, তবে তার সর্বাঙ্গীণ উন্নতি হতে পারে না।

 বঙ্কিমচন্দ্র ‘ধর্মতত্ত্ব’ গ্রন্থে ‘অনুশীলন’ প্রসঙ্গে সর্বাঙ্গীণ ধর্মের ব্যাখ্যা করেছেন, তাঁর পরেও বহু মনীষী অনুরূপ উপদেশ দিয়েছেন। আধুনিক যুগে বোধ হয় বিবেকানন্দই একমাত্র সন্ন্যাসী যিনি সর্ব ভারতে কালোপযোগী বলিষ্ঠ ধর্মের প্রচার করেছেন। এদেশে সম্প্রতি বহু ধর্মোপদেষ্টা সাধুর আবির্ভাব হয়েছে, তাঁদের ভক্তও অসংখ্য। তাঁরা প্রধানত ভক্তিতত্ত্ব এবং ভগবানের লীলাই প্রচার করেন। বহু ভক্ত তাঁদের কথায় শোকে শান্তি পায়, দয়া ক্ষমা অলোভ প্রভৃতি সদ্‌গুণের প্রেরণা পায়। কিন্তু তাঁদের ধর্মব্যাখ্যান এমন নয় যাতে আমাদের জাতিচরিত্রের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি হতে পারে। ভক্তগণের মতে তাঁদের কেউ কেউ অলৌকিক শক্তির প্রভাবে অনুগত জনের আর্থিক উন্নতি করতে পারেন, রোগ সারাতে পারেন, মকদ্দমা জেতাতে পারেন, নানা রকম ভেলকি দেখাতেও পারেন। কয়েক জনের শিষ্যরা প্রচার করে থাকেন যে তাঁদের ইষ্টগুরু ভগবানের অবতার বা পূর্ণ ভগবান। গুরু তা অস্বীকার করেন না, blasphemyর জন্য শিষ্যকে ধমকও দেন না। আমাদের অন্য অভাব যতই থাকুক অবতারের অভাব নেই। সাধুদের পরিত্রাণ আর দুষ্কৃতদের বিনাশ―এই হল অবতারের আসল কাজ। তার দিকে এঁরা একটু দৃষ্টি দেন না কেন?