পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/১৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
১৩৪

বিদ্বেষ ত্যাগ করা দুঃসাধ্য। শুচিতার ধারণা সকলের সমান নয়। এদেশের লোক আহারের পর আচমন করে, মলত্যাগের পর জলশৌচ করে, অতি দরিদ্রও প্রত্যহ স্নান করে। এই সব বিষয়ে অধিকাংশ পাশ্চাত্ত্য জাতি অপেক্ষাকৃত অপরিচ্ছন্ন। অনেক ইওরোপীয় নারী তার সন্তানের মুখ থুতু দিয়ে পরিষ্কার করে দেয়, বিড়াল যেমন করে।

 কয়েকটি বিষয়ে শুচিতায় শ্রেষ্ঠ হলেও ভারতবাসীর কদভ্যাস অনেক আছে। যে অপরিচ্ছন্নতা দারিদ্র্যের ফল তা ধরছি না, কিন্তু যারা অর্থবান ও ভদ্রশ্রেণীভুক্ত তাঁদেরও অনেক বিষয়ে শুচিতার অভাব দেখা যায়। বড় সওদাগরী আপিসে সাহেব আর দেশী কর্মচারীর জন্য আলাদা সিঁড়ি আছে। এখনকার দেশী সাহেবরাও বোধ হয় এই ব্যবস্থা বজায় রেখেছেন। পার্থক্যের কারণ কি তা সিঁড়ি দেখলেই বোঝা যায়। ভারতবাসীর বিচারে নিষ্ঠীবনের স্পর্শই ঘৃণ্য, দৃশ্য নয়, যত্র তত্র থুতু ফেলার অভ্যাস বহু লোকের আছে। দেশী সিঁড়ির স্থানে স্থানে আধার আছে, কিন্তু তাতে অভীষ্ট ফল হয় না, আধার ছাপিয়ে দেওয়ালে পর্যন্ত পানের পিকের দাগ লাগে। সাহেবী সিঁড়ির এই বীভৎস কলঙ্ক নেই। যারা পরিচ্ছন্নতা চায় তাদের পৃথক সিঁড়ি আর পৃথক সমাজ না হলে চলে না।

 ক্লাব বা আড্ডায় সমশ্রেণীর লোকেই স্থান পায়। বিলাতী ক্লাবে প্রবেশের নিয়ম খুব কড়া, যে-কেউ ইচ্ছা করলেই সদস্য হতে পারে না। বাঙালীর আড্ডায় সাধারণত নির্দিষ্ট কয়েক জনকেই দেখা যায় কিন্তু নূতন লোকও স্থান পায় যদি তার আচার-ব্যবহার বিসদৃশ না হয়। ক্লাব বা আড্ডার যে রীতি, দেবমন্দির বা উপাসনাগৃহেরও তাই। যিনি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন তিনি সাধারণত নিজ শ্রেণীর জন্যই করেন, এই কারণে নিম্ন জাতি মন্দির প্রবেশে বাধা পায়। কালক্রমে যদি প্রতিষ্ঠাতার উত্তরাধিকারীদের স্বত্বের প্রমাণ লোপ পায় তবে সরকারী