পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/৬৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
৫৮

ভারতব্যাপী কাটতি হবে। লেখকের ক্ষমতা আর পাঠকের রুচির সামঞ্জস্য করে বলা যেতে পারে যে, গল্পের পাত্র-পাত্রী যদি কতক বাঙালী আর কতক অন্যপ্রদেশবাসী হয় তবেই সব চেয়ে ভাল ফল হবে। যাঁরা বাংলা গল্প লিখে খ্যাতি লাভ করেছেন এবং বিহারী উত্তরপ্রদেশী প্রভৃতি সমাজের সঙ্গে পরিচিত, স্থবির না হলে তাঁরা হিন্দী ভাষা আয়ত্ত করে এই কাজে নামতে পারেন। ফরাসী জার্মন চেক হাঙ্গেরীয় পোল প্রভৃতি অনেক বিদেশী ইংরেজীতে লিখে যশস্বী হয়েছেন। তাঁদের ভাষায় সময়ে সময়ে ভুল হয়, তার জন্য একটু আধটু উপহাসও সইতে হয়। কিন্তু রচনার গুণাধিক্যে তাঁদের ছোট ছোট ত্রুটি চাপা পড়ে যায়।

 বাঙালী সাহিত্যিকের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। এঁদের জনকতক যদি হিন্দী লেখায় মন দেন তা হলে বাংলা সাহিত্য নিঃস্ব হবে না। এঁদের প্রভাবে হিন্দী ভাষাও ক্রমশ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষার নিকটতর হবে। নগেন্দ্র গুপ্ত, প্রভাত মুখো, এবং চারু বন্দ্যো তাঁদের অনেক গল্পে বিহারী ও উত্তরপ্রদেশী পাত্র-পাত্রীর অবতারণা করেছেন। এইসকল গল্প হিন্দীতে লেখা হলে ভারতব্যাপী সমাদর পেত। উপেন্দ্র গঙ্গো, শরদিন্দু বন্দ্যো, বিভূতি মুখো এবং বনফুলের অনেক গল্পে অবাঙালী নরনারীর মনোজ্ঞ চিত্র আছে। এঁরা বহুকাল বাংলা দেশের বাইরে বাস করেছেন, সেখানকার সমাজের খবর রাখেন, অল্পাধিক হিন্দী জানেন, এবং সকলেই ভূরিলেখক। মাতৃভাষা চর্চায় ক্ষান্ত না হয়েও এঁরা মাঝে মাঝে মাতৃষ্বসার ভাষা নিয়ে পরীক্ষা করে দেখতে পারেন।

 ১৩৫৮