পাতা:বিচিন্তা - রাজশেখর বসু.pdf/৭৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিচিন্তা
৬৮

ঐতিহ্য সংস্কার রুচি আদর্শ ও রীতিনীতি যেমন বহু অংশে বিজাতীয়, তোমাদেরও তেমনি। তফাত এই যে আমাদের ইতিহাসের একটা সুনির্দিষ্ট আরম্ভ আছে―ইসলামের অভ্যুদয়, কিন্তু তোমাদের তা নেই। সেজন্য পুরাকালে পিছিয়ে গিয়ে বেদ-পুরাণের উপকথার মধ্যে বিভ্রান্ত হয়ে তোমরা নিজেদের ইতিহাস খুঁজছ।

 কোনও জাতি যদি চিরকাল অভ্যদ্য প্রাচীরের মধ্যে বাস করে তবেই তার ধর্ম সমাজব্যবস্থা সংস্কৃতি ইত্যাদি স্বতন্ত্র ও অনন্যভাবে গড়ে উঠতে পারে। কিন্তু সাধারণত তা দেখা যায় না, এক জাতির উপর অন্যান্য জাতির প্রভাব নানাভাবে এসে পড়ে। রক্তের মিশ্রণ, বিজাতির অধীনতা বা বিধর্ম গ্রহণ যদি নাও হয় তথাপি পরিবর্তন আসতে পারে। আরব জাতি মুসলমান হবার পরেও প্রাচীন গ্রীসের দর্শন-বিজ্ঞান বিনা দ্বিধায় আত্মসাৎ করেছিল এবং মধ্যযুগের ইওরোপ আরবদের কাছ থেকেই গ্রীক বিদ্যা লাভ করেছিল। বর্তমান ইওরোপীয় ও আমেরিকান জাতিসকল প্রধানত খ্রীষ্টান, পেগান গ্রীক ও রোমানদের সঙ্গে তাদের ধর্মগত যোগ নেই, বংশগত যোগও বিশেষ কিছু নেই, তথাপি তাদের সংস্কৃতির উপর প্রাচীন গ্রীক ও রোমান জাতির অপরিসীম প্রভাব এসে পড়েছে। ইওরোপ আমেরিকার শিক্ষিত জন সকলেই স্বীকার করেন যে অতিপ্রাচীন বিভিন্ন জাতি থেকে তাঁদের উৎপত্তি হয়েছে, পশ্চিম এশিয়া থেকে তাঁরা খ্রীষ্টধর্ম পেয়েছেন, গ্রীস রোম থেকে সভ্যতার বীজ স্বরূপ দর্শন বিজ্ঞান ইতিহাস সাহিত্য স্থাপত্য প্রভৃতি বিদ্যা পেয়েছেন, তাঁদের সংস্কৃতির অবশিষ্ট অংশ তাঁরা নিজের যত্নে এবং প্রতিবেশী জাতিদের সহায়তায় গড়ে তুলেছেন।

 সেকালের ভারতবাসী পুরাণোক্ত সৃষ্টিতত্ত্বে ও জাতিতত্ত্বে বিশ্বাস করত। ষাট-সত্তর বৎসর আগেকার বাঙালী শিক্ষিত সম্প্রদায়