বিদায়-আরতি
বাদাম-গাছের পাৎলা পাতায় লাগ্ছে হাওয়া দিক্-ভোলা,
হাস্ছে আলো আকাশভরা, হাস্ছে হাসি দিল্-খোলা।
* * *
সপ্তসেতুর শহরে আজ নূতন হিমের পড়্ছে ঘের,
শৈল-পটে বরফ-হরফ নূতন কে গো লিখ্ছে ফের,
হ্রদের জলে কমল লুকায়—মন্ত্রে যেন যায় উড়ে,
পদ্মফুলের পাপ্ড়ি শুকায় পদ্মপাতার কোল জুড়ে’,
শিঠিয়ে ওঠে কাঁটার মালা বেগ্নি পাতায় পানফলের,
ট্যাঁপের ট্যাঁপা ফলগুলো সব শীতের শাসন পাচ্ছে টের,
সর্ষেফুলের ঝাঁঝালো মউ, পদ্মফুলের মউ মিঠে,—
মৌমাছিরা ভিয়েন্ করে, নেই অপচয় এক-ছিটে,
ভাসা ক্ষেতে খাট্ছে চাষা শেষ-ফসলের তদ্বিরে,
কাংড়িতে ফের ভরছে আগুন বুড়োবুড়ী গম্ভীরে,
হাঁজীর মেয়ে আজকে সাঁঝে প্রাচীন কাঁথা জড়িয়েছে,
শীতের বাতাস প্রাচীন গাথা পাণ্ডু পাতা ছড়িয়েছে,
বরফি-কাটা ক্ষেতের পরে জাফরানে ফুল ফুট্ল রে,
শিশির-জলে ঘুম-জড়ানো চোখের ঘুম কি টুটল রে!
নীল-লোহিতের বিভূতি ওই লেগেছে আজ আস্মানে,
লেগেছে য়োস্মিনীর ফুলে, আর লেগেছে মোর প্রাণে,
নীলের কোলে সোনার কেশর, নীলসুখেতে’ স্পন্দমান,
নীলপাহাড়ের ফুলদানীতে প্রফুল্ল জাফ্রানিস্থান।