পাতা:বিদ্যাসাগর-প্রসঙ্গ.pdf/২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

১৯

 একদিন সকালে উঠিয়াই শুনি মেয়েমহলে খুব সোরগোল উঠিয়াছে— “ওমা এমন ত কখনও শুনিনি, বামুনের ছেলে অমৃতলাল মিত্তিরের পাত থেকে রুই মাছের মুছোটা কেড়ে খেয়েছে।” কেউ বলিল—ঘোর কলি! কেউ বলিল—সব একাকার হয়ে যাবে; কেউ বলিল—জাতজন্ম আর থাকবে না। আমি মাকে জিজ্ঞাসা করিলাম—কে কেড়ে খেয়েছে?,মা বলিলেন—জানিস্ নি? বিদ্যেসাগর। আমি জিজ্ঞেস করলুম—তিনি কি এখানে এসেছেন? মা বলিলেন—হ্যাঁ হ্যাঁ—কাল থেকে এসেছেন।

 বাড়ির পুরুষদেরও দেখিলাম সব মুখ ভার। কেউই বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এ ব্যবহারটা পছন্দ করেন নাই। না-করিবারই কথা। কেন-না সেই বৎসরই প্রথম বর্ষায় একদিন আমার দাদা, আমার নূতন ভগ্নীপতি এবং আমার এক জ্যেঠতুত ভাই—তিনজনে গোয়ালঘরে লুকিয়ে মুসুর ডালের খিচুড়ি রেঁধে খেয়েছিলেন—এই অপরাধে বাড়ির বুড়োকর্ত্তা তিনজনকেই বাড়ি থেকে বার ক’রে দিয়েছিলেন;— তারা এক প্রতিবেশীর বৈঠকখানায় শুইয়া থাকিত; বাড়ি থেকে ভাত বহিয়া তাহাদিগকে খাওয়াইয়া আসিতে হইত। ক্রমে মা’র অত্যন্ত সাধ্যসাধনায় বুড়োকর্ত্তা বৈধ গঙ্গাস্নান করাইয়া আমার ভগ্নীপতিকে প্রায় পনর দিন পরে বাড়ি আসিতে দিলেন। বাকী দুজনের আরও ১৫ দিন লাগিয়াছিল। সে-বাড়ির লোকে মেয়ে-পুরুষে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের এই ব্যবহারে যে আশ্চর্য্য হইয়া যাইবেন, সে কথা কি আর বলিতে!

 যাহা হউক, সেইদিন বৈকালে বাবা টোলে যান নাই, বাড়ির একটা ছাতে বসিয়া পুঁথি দেখিতেছিলেন; আমরাও ছাতে খেলা করিতেছিলাম। এমন সময় দেখিলাম—দু’জন ভদ্রলোক বাবার সহিত সাক্ষাৎ করিতে আসিলেন। একজনের গায়ে ধবধবে বিছানার চাদর, পায়ে তালতলার চটী, গায়ে একটা চৌ-বন্দি হাতকাটা ফতুয়া। শুনিলাম ইনিই বিদ্যাসাগর। সঙ্গের লোকটি কে—সে খবর পাইলাম না। বাবা