পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১২৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনচরিত—বলণ্টিন জামিরে ডুবাল
১০১

মধ্যে এক জন পরে মেরিয়া থেরিসার পাণিগ্রহণ করেন এবং জর্ম্মনিরাজ্যের সম্রাট হয়েন।

 এই ব্যাপার নয়নগোচর করিয়া, সকলেই এক কালে মুগ্ধ হইলেন; পরিশেষে যখন কতিপয় প্রশ্ন দ্বারা তাঁহার বিদ্যা ও বিদ্যাগমের উপায় সবিশেষ অবগত হইলেন, তখন তাঁহারা বাকপথাতীত বিস্ময় ও সন্তোষ সাগরে মগ্ন হইলেন। সর্ব্বজ্যেষ্ঠ রাজকুমার, তৎক্ষণাৎ কহিলেন, তুমি রাজসংসারে চল, আমি তোমাকে এক উত্তম কর্ম্মে নিযুক্ত করিব। ডুবাল কোনও কোনও পুস্তকে পাঠ করিয়াছিলেন, রাজসংসারের সংস্রবে মনুষ্যের ধর্ম্মভ্রংশ হয়; এবং নান্সিতেও দেখিয়াছিলেন, বড় মানুষের অনুচরেরা প্রায় লম্পট ও কলহপ্রিয়; অতএব অকপট বাক্যে কহিলেন, আমার রাজসেবায় অভিলাষ নাই; চির কাল অরণ্যে থাকিয়া গোচারণ করিয়া নিরুদ্বেগে জীবনক্ষেপণ করিব; আমি এ অবস্থায় সম্পূর্ণ সুখে আছি; কিন্তু ইহাও কহিলেন, যদি আপনি অনুগ্রহ করিয়া আমার উত্তম উত্তম পুস্তক পাঠ ও সমধিক বিদ্যা ও জ্ঞান লাভের সুযোগ করিয়া দেন, তাহা হইলে আমি আপনকার সমভিব্যাহারে যাইতে প্রস্তুত আছি।

 রাজকুমার এই উত্তর শ্রবণে অত্যন্ত সন্তুষ্ট হইলেন; এবং রাজধানীতে প্রত্যাগমন পূর্ব্বক, ডুবালের যথানিয়মে সৎপণ্ডিত ও সদুপাদেশকের নিকট বিদ্যাধ্যয়নসমাধানের নিমিত্ত, নিজ পিতা ডিউককে সম্মত করিয়া, তাহাকে পোণ্টে মৌসলের জেসুটদিগের সংস্থাপিত বিদ্যালয়ে পাঠাইয়া দিলেন।

 ডুবাল তথায় দুই বৎসর অবস্থিতি করিয়া জ্যোতিষ, ভূগোল, পুরাবৃত্ত ও পৌরাণিক বিষয় সকল সমধিক রূপে অধ্যয়ন করিলেন। তদনন্তর, ১৭১৮ খৃঃ অব্দের শেষভাগে, ডিউকের পারিসযাত্রাকালে, তদীয় সম্মতিক্রমে তৎসমভিব্যাহারে গমন করিলেন, এই অভিপ্রায়ে যে তত্রত্য অধ্যাপকদিগের নিকট শিক্ষা প্রাপ্ত হইতে পরিবেন। পর বৎসর, তিনি তথা হইতে লুনিবিলে প্রত্যাগমন করিলে, ডিউক মহাশয় তাঁহাকে সহস্র মুদ্রা বেতনে আপনার পুস্তকালয়ের অধ্যক্ষ ও সাত শত মুদ্রা বেতনে বিদ্যালয়ে পুরাবৃত্তের অধ্যাপক নিযুক্ত করিলেন, এবং কোনও বিষয়ে কোনও নিয়মে বদ্ধ না করিয়া, সচ্ছন্দে রাজবাটীতে অবস্থিতি করিতে অনুমতি দিলেন।

 তিনি পুরাবৃত্তে যে উপদেশ দিতে লাগিলেন, তাহাতে তাহার এমন সুখ্যাতি হইল যে, অনেকানেক বৈদেশিকেরাও লুনিবিলে আসিয়া তদীয়শিষ্যশ্রেণীতে নিবিষ্ট হইতে লাগিলেন।