হলণ্ডের অন্তঃপাতী লোবিষ্টিনের দুর্গমধ্যে যাবজ্জীবন কারানিরুদ্ধ হইলেন। এইরূপ দারুণ অবিচারের পর, তাঁহার সর্ব্বস্ব হৃত হইল।
বিচারারম্ভের পূর্ব্বে, গ্রোশ্যাস কোনও সাংঘাতিক রোগে আক্রান্ত হইয়াছিলেন। তৎকালে তাঁহার সহধর্ম্মিণী, তাঁহার সহিত সাক্ষাৎকার করিবার নিমিত্ত সাতিশয় উৎসুক্য হইয়াও, কোনও ক্রমে তাঁহার নিকটে যাইতে পান নাই; কিন্তু তাঁহার দণ্ডবিধানের পর, কারাবাসসহচরী হইবার প্রার্থনায় ব্যগ্রতাপ্রদর্শন পূর্ব্বক আবেদন করিয়া, তদ্বিষয়ে অনুমতি প্রাপ্ত হইলেন। গ্রোশ্যস, তাঁহার এইরূপ অনির্ব্বচনীয় অনুরাগ দর্শনে মুগ্ধ ও প্রীত হইয়া, এক স্বরচিত লাটিন কাব্যে তাঁহার ভূয়সী প্রশংসা লিখিয়াছেন, এবং তাঁহার সন্নিধানাবস্থানকে কারাবাসক্লেশরূপ অন্ধতমসে সূর্য্যকারোদয়স্বরূপ বর্ণনা করিয়াছেন।
হলণ্ডের লোকেরা গ্রোশ্যাসের গ্রাসাচ্ছাদননির্বাহার্থে আনুকূল্য করিবার প্রস্তাব করিয়াছিলেন। কিন্তু তাঁহার পত্নী সমুচিতগর্ব্বপ্রদর্শন পূর্ব্বক উত্তর দিলেন, আমার যাহা সংস্থান আছে। তদ্দ্বারাই তাঁহার আবশ্যক ব্যয় নির্বাহ করিতে পারিব, অন্যের আনুকূল্য আবশ্যক নাই। তিনি, স্ত্রীজাতিসুলভবৃথাশোকপরবশ না হইয়া, সাধ্যানুসারে পতিকে সুখী ও সন্তুষ্ট করিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন। গ্রোশ্যাসের অধ্যয়নানুরাগও এক বিলক্ষণ বিনোদনোপায় হইয়াছিল। বস্তুতঃ, গুণবতীভার্য্যাসহায় ও প্রশস্তপুস্তকমণ্ডলীপরিবৃত ব্যক্তির সাংসারিক সঙ্কটে বিষন্ন হইবার বিষয় কি। তথাহি, গ্রোশ্যাস, যাবজ্জীবন কারাবাসাদণ্ডে নিগৃহীত হইয়াও, নিজ পত্নীর সন্নিধান ও অভিমত অধ্যয়ন দ্বারা প্রফুল্ল চিত্তে কালযাপন করিয়াছিলেন।
কিন্তু, তাঁহার পত্নী তদীয় উদ্ধারসাধনে একান্ত অধ্যবসায়িনী ছিলেন। যাঁহারা অসন্দিগ্ধ চিত্তে তাঁহাকে পতিসমভিব্যাহারে কারাগারে বাস করিবার অনুমতি দিয়াছিলেন, বোধ হয়, পতিপ্রাণা কামিনীর বুদ্ধিকৌশলে ও উদ্যোগে কি পর্য্যন্ত কার্য্যসাধন হইতে পারে, তাঁহারা তদ্বিষয়ের বিশেষজ্ঞ ছিলেন না। তিনি, এক মুহুর্তের নিমিত্তেও, এই অভিলষিতসমাধানের উপায়চিন্তনে বিরতা হয়েন নাই; এবং যদ্বারা এতদ্বিষয়ের আনুকূল্য হইবার সম্ভাবনা, তাদৃশ ব্যাপার উপস্থিত হইলে, তদ্বিষয়ে কোনও ক্রমেই উপেক্ষা করিতেন না।
গ্রোশ্যাস সন্নিহিতনগরবর্ত্তী বন্ধুবর্গের নিকট হইতে পাঠার্থ পুস্তকানিয়নের অনুমতি পাইয়াছিলেন। পাঠসমাপ্তির পর, সেই সকল পুস্তক করগুকমধ্যগত করিয়া প্রতিপ্রেরিত হইত। ঐ সমভিব্যাহারে তাঁহার মলিন বস্ত্রও ক্ষালনার্থে রজকালয়ে যাইত। প্রথমতঃ,