পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১২৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জীবনচরিত—গ্রোশ্বাস
১০৭

রক্ষকেরা তন্ন তন্ন করিয়া ঐ করগুকের বিষয়ে অনুসন্ধান করিত; কিন্তু কোনও বারেই সন্দেহোদ্বোধক বস্তু দৃষ্টিগোচর না হওয়াতে, ক্রমে শিথিলপ্রযত্ন হয়। গ্রোশ্যসের পত্নী, রক্ষিগণের উত্তরোত্তর অযত্নপ্রাদুর্ভাব দেখিয়া, পতিকে সেই করগুকমধ্যগত করিয়া স্থানান্তরিত করিবার উপায় কল্পনা করিলেন। বায়ুপ্রবেশার্থে তিনি তাহাতে কতিপয় ছিদ্র প্রস্তুত করিলেন; এবং গ্রোশ্যাস এইরূপ সংক্ষিপ্ত স্থানে রুদ্ধ হইয়া কত ক্ষণ পর্য্যন্ত থাকিতে পারেন, ইহাও পরীক্ষা করিতে লাগিলেন। অনন্তর, তিনি এক দিবস, দুর্গাধ্যক্ষের অসন্নিধানরূপ সুযোগ দেখিয়া, তাহার সহধর্ম্মিণীর নিকটে গিয়া, নিবেদন করিলেন, আমার স্বামী অত্যধিক অধ্যয়ন দ্বারা শরীরপাত করিতেছেন; এজন্য, আমি সমুদায় পুস্তক এক কালে ফিরিয়া দিতে বাসনা করি।

 এইরূপ প্রার্থনা দ্বারা তাঁহার সম্মতিলাভ হইলে, নিরূপিত সময়ে গ্রোশ্যস করণ্ডকমধ্যে প্রবেশ করিলেন। দুই জন সৈনিক পুরুষ অধিরোহণী দ্বারা অতি কষ্টে করণ্ডক অবতীর্ণ করিল। ঐ করণ্ডক সমধিক ভারাক্রান্ত দেখিয়া, তাঁহাদের অন্যতর পরিহাস পূর্ব্বক কহিল, ভাই! ইহার ভিতরে অবশ্যই এক আর্ম্মিনিয় আছে। গ্রোশ্যাসের পত্নী অব্যাকুল চিত্তে উত্তর করিলেন, হাঁ ইহার মধ্যে অনেক আর্ম্মিনিয় পুস্তক আছে বটে। যাহা হউক, সৈনিক পুরুষ, করণ্ডকের অসম্ভবভারদর্শনে সন্দিহান হইয়া, উচিতবোধে অধ্যক্ষপত্নীর গোচর করিল। কিন্তু তিনি কহিলেন, ইহার মধ্যে বহুসংখ্যক পুস্তক আছে, তাহাতেই এত ভারী হইয়াছে; গ্রোশ্যাসের শারীরিকস্বাস্থ্যরক্ষার্থে, তাঁহার পত্নী ঐ সমুদায় পুস্তক এক কালে ফিরিয়া দিবার নিমিত্ত অনুমতি লইয়াছেন।

 এক দাসী এই গোপনীয় পরামর্শের মধ্যে ছিল, সে ঐ করাণ্ডকের সঙ্গে সঙ্গে গমন করিল। কারণ্ডক এক বন্ধুর আলয়ে নীত হইলে, গ্রোশ্যাস অব্যাহত শরীরে তন্মধ্য হইতে নির্গত হইলেন, রাজমিস্ত্রির বেশপরিগ্রহ ও করে কর্ণিক ধারণ পূর্ব্বক, আপণের মধ্য দিয়া গমন করিয়া, নৌকারোহণ করিলেন এবং ব্রাবণ্টে উপস্থিত হইয়া তথা হইতে শকটযানে এণ্টওয়ের্প প্রস্থান করিলেন। ১৬২১ খৃঃ অব্দের মার্চ মাসে, এই ব্যাপার সম্পন্ন হয়। গ্রোশ্যাসের সহধর্ম্মিণীর যত দিন এরূপ দৃঢ় প্রত্যয় না জন্মিল, গ্রোশ্যাস সম্পূর্ণ রূপে বিপক্ষাবর্গের ক্ষমতার বহির্ভূত হইয়াছেন, তাবৎ তিনি সকলের এই বিশ্বাস জন্মাইয়া রাখিয়াছিলেন যে, তাঁহার স্বামী অত্যন্ত রোগাভিভূত হইয়া শয্যাগত আছেন।

 কিয়ৎ দিন পরে এই বিষয় প্রকাশ হইলে, তিনি পূর্ব্বাপর সমুদায় স্বীকার করিলেন। তখন দুর্গাধ্যক্ষ ক্রোধে অন্ধ হইলেন এবং তাঁহাকে দৃঢ় রূপে রুদ্ধ করিয়া যৎপরোনাস্তি