পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১৫৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৩২ বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা এই রূপে পিসানগর হইতে অপসারিত হইয়া, গালিলিয় বিষয়কৰ্ম্মশূন্ত হইয়। কালযাপন করিতে লাগিলেন । কিন্তু ইটালির প্রদেশান্তরীয় লোকেরা, তাহার বিদ্যা বুদ্ধির উৎকর্ষ বুঝিতে পারিয়া, ১৫৯২ খৃঃ অব্দে, তাহাকে পেড়ুয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিতের অধ্যাপকপদে নিযুক্ত করিলেন । এই স্থলে তিনি সুচারু রূপে উপদেশ দিতে লাগিলেন । ইয়ুরোপের দূরতরপ্রদেশ হইতেও শিষ্যমণ্ডলী উপস্থিত হইতে লাগিল। ইয়ুরোপীয় পণ্ডিতেরা সৰ্ব্বত্র লাটিনভাষাতেই উপদেশ দিতেন ; গালিলিয় তাহ। পরিত্যাগ করিয়া ইটালীয় ভাষায় আরম্ভ করিলেন। তৎকালে এই নূতন প্রণালী অবলম্বন করাও একপ্রকার সাহসের কৰ্ম্ম বলিয়া পরিগণিত হইয়াছিল । পেড়ুয়াতে অষ্টাদশ বৎসর অবস্থিতি করিয়া, তিনি পদার্থবিদ্যাসংক্রান্ত ষে সকল নূতন নূতন নিয়ম উদ্ভাবিত করেন, তাহা তৎকালপ্রচলিত মতের নিতান্ত বিপরীত। তথাপি তিনি, আশঙ্কিত ও অসঙ্কুচিত চিত্তে, শিষ্যদিগকে আনুষঙ্গিক সেই সকল বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগিলেন । জেন্সননামক এক জন ওলন্দাজ এক অভিনব যন্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণ করিয়াছিলেন । তদ্বারা অবলোকন করিলে দূরবর্তী পদার্থ সকল সন্নিহিত বোধ হয়। গালিলিয় ঐ রূপ যন্ত্রের উদ্ভাবনবিষয়ে প্রস্তুতপ্রায় হইয়াছিলেন ; এক্ষণে, ১৬০৯ খৃঃ অব্দে, তিনি শুনিবামাত্র, উহ। কি কি উপাদানে নিৰ্ম্মিত হইয়াছিল, তাহা বুঝিতে পারিলেন এবং এক দিবসও বিলম্ব না করিয়া, তদপেক্ষ অনেক অংশে উত্তম তথাবিধ এক যন্ত্ৰ নিৰ্ম্মাণ করিলেন । এই রূপে দূরবীক্ষণের স্বষ্টি হইল। ইহা পদার্থবিদ্যাসংক্রান্ত যাবতীয় যন্ত্র অপেক্ষা অধিক উপকারক। গালিলিয়, এই দৃষ্টিপোষক নলাকার নূতন যন্ত্র নভোমণ্ডলে প্রয়োগ করিয়া, দেখিতে পাইলেন, চন্দ্রমণ্ডলের উপরিভাগ অত্যন্ত বন্ধুর ; সূৰ্য্যমণ্ডল সময়ে সময়ে কলঙ্কিত লক্ষ্য হয় ; ছায়াপথ সূক্ষ্মতারকাস্তবকমাত্র ; বৃহস্পতি পারিপাশ্বিকচতুষ্টয়ে পরিবেষ্টিত ; শুক্রগ্রহের, চন্দ্রের ন্যায়, হ্রাস বৃদ্ধি আছে ; শনৈশ্চরের উভয় পাশ্বে পক্ষাকার কোনও পদার্থ আছে । ঐ পক্ষ এক্ষণে অঙ্গুরীয় বলিয়া সিদ্ধান্তিত হইয়াছে। বোধ হয়, গালিলিয় বহুকালাবধি মনে করিতেন, নভস্তলস্থিত বস্তু সকল যেরূপ দেখিতে পাওয়া যায়, বাস্তবিক সেরূপ নহে। কিন্তু কোনও কালে যে এই গৃঢ় তত্ত্বের মৰ্ম্মোদ্ভেদ করিতে পরিবেন, তাহার এমন আশা ছিল না। এক্ষণে, এই সকল বিষয় প্রকাশ করিয়া, তাহার অন্তঃকরণ কি অভূতপূৰ্ব্ব চমৎকার ও অনির্বচনীয় আনন্দে পরিপূর্ণ হইল, তাহা কোনও রূপেই অনুভব করিতে পারা যায় না।