পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/১৮৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

১৬৬ বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা প্রায় সকল বস্তু জানিতে পারা যায় । বায়ু দেখিতে পাওয়া যায় না, কিন্তু স্পর্শেন্দ্রিয় দ্বারা উহার অনুভব হয় । এই পাচ ইন্দ্রিয় জ্ঞানের পথ স্বরূপ । ইন্দ্রিয়পথ দ্বারা আমাদের মনে জ্ঞানের সঞ্চার হয়। ইন্দ্রিয়বিহীন হইলে, আমরা সকল বিষয়ে সম্পূর্ণ অজ্ঞান থাকিতাম। এই সমস্ত ইন্দ্রিয়ের বিনিয়োগ দ্বারা অভিজ্ঞতা জন্মে । অভিজ্ঞতা জন্মিলে, ভাল, মন্দ, হিত, অহিত, এই সমস্ত বিবেচনা করিবার শক্তি হয়। অতএব, ইন্দ্রিয় মনুষ্যের পক্ষে অশেষ প্রকারে উপকারক । মনুষ্যের ন্যায়, পশু, পক্ষী, ও অন্য অন্ত জন্তুরও এই সকল ইন্দ্রিয় আছে । কিন্তু, তাহাদের কোনও কোনও ইন্দ্রিয়, মনুৰ্যোর অপেক্ষা, অধিক প্রবল। বিড়ালের শ্রবণশক্তি অনেক অধিক। কোনও কোনও কুকুরজাতির ভ্রাণশক্তি অতিশয় প্রবল। এরূপ হইবার তাৎপৰ্য্য এই যে, বিড়ালের শ্রবণশক্তি অধিক ন হইলে, অন্ধকারময় স্থানে মূৰ্ষিক প্রভৃতির সঞ্চার বুঝিতে পারিত না । কোনও কোনও কুকুরজাতি, পলায়িত পশুর গাত্ৰগন্ধের আভ্রাণ অনুসারে, তাহার অন্বেষণ করিয়া লয়। ভ্রাণশক্তি এত অধিক না হইলে, তাহারা সহজে শিকার করিতে পারিত না । কোনও কোনও কুকুরজাতি, আঘ্ৰাণ দ্বারা শিকার না করিয়া, দৃষ্টি দ্বারা শিকার করে। ইহাদের দর্শনশক্তি অতিশয় প্রবল। যে পশুর অনুসরণে প্রবৃত্ত হয়, উহা অধিক দূরবত্তী হইলেও ইহারা দেখিতে পায়। যেখানে অল্প অন্ধকার, সেখানে বিড়াল, মনুষ্য অপেক্ষা, অনেক ভাল দেখিতে পায় । কিন্তু যেখানে ঘোর অন্ধকার, কিছু মাত্র আলোক নাই, সেখানে বিড়াল, মনুষ্য অপেক্ষা, অধিক দেখিতে পায় না । ** এইরূপ, যে জন্তুর যে ইন্দ্রিয়ের যেরূপ শক্তি অবশ্যক, ঈশ্বর তাহাকে তাহাই দিয়াছেন। তিনি কাহারও কোনও বিষয়ে নূ্যনত রাখেন নাই । বাক্যকথন—ভাষা মনুষ্যেরা, মুখ দ্বারা শব্দের উচ্চারণ করিয়া, মনের ভাব ব্যক্ত করে। শব্দের উচ্চারণ বিষয়ে জিহবাই প্রধান সাধন । শব্দের উচ্চারণকে কথা কহ বলে, এবং উচ্চারিত শব্দের নাম ভাষা । যে শক্তি দ্বারা শব্দের উচ্চারণ নিম্পন্ন হয়, তাহাকে বাকশক্তি বলে ।