সিরাজ উদ্দৌলা অপেক্ষা ভদ্র নহেন; কিন্তু, মনে মনে এই আশা করিয়াছিলেন, আপাততঃ, এই উপায় দ্বারা, উপস্থিত বিপদ হইতে মুক্ত হইয়া, পরে, কোনও যথার্থ ভদ্র ব্যক্তিকে সিংহাসনে নিবিষ্ট করিতে পরিবেন।
এ বিষয়ে সমুদয় পরামর্শ স্থির হইলে, সকতজঙ্গের সুবাদারীর সনন্দপ্রার্থনায়, দিল্লীতে দূত প্রেরিত হইল। আবেদন পত্রে বার্ষিক কোটি মুদ্রা কর প্রদানের প্রস্তাব থাকাতে, অনায়াসেই তাহাতে সম্রাটের সম্মতি হইল।
সিরাজ উদ্দৌলা, এই চক্রান্তের সন্ধান পাইয়া, অবিলম্বে সৈন্য সংগ্রহ করিয়া, সকতজঙ্গের প্রাণদণ্ডার্থে, পূর্ণিয়া যাত্রা করিলেন। সৈন্য সকল, রাজমহলে উপস্থিত হইয়া, গঙ্গা পার হইবার উদ্যোগ করিতেছে, এমন সময়ে, নবাব, কলিকাতার ড্রেক সাহেবের নিকট হইতে, আপন পূর্ব্বপ্রেরিত পত্রের এই উত্তর পাইলেন, আমি আপনকার আজ্ঞায় কদাচি সম্মত হইতে পারি না।
এই উত্তর পাইয়া, তাঁহার কোপানল প্রজ্বলিত হইয়া উঠিল। তখন তিনি, ইঙ্গরেজেরা রাজ্যের বিরুদ্ধাচারীদিগকে আশ্রয় দিতেছে; এবং, আমার অধিকারের মধ্যে, দুর্গনির্মাণ করিয়া, আপনাদিগকে দৃঢ়ীভূত করিতেছে; অতএব, আমি তাহাদিগকে নির্মূল করিব; এই প্রতিজ্ঞা করিয়া, সৈন্যদিগকে, অবিলম্বে শিবির ভঙ্গ করিয়া, কলিকাতা যাত্রা করিতে আদেশ দিলেন; কাশিম বাজারে ইঙ্গরেজদিগের যে কুঠী ছিল, আগমনকালে তাহা লুঠ করিলেন; এবং, তথায় যে যে য়ুরোপীয়দিগকে দেখিতে পাইলেন, সকলকেই কারারুদ্ধ করিলেন।
কলিকাতাবাসী ইঙ্গারেজেরা, ষাটি বৎসরের অধিক কাল, নিরুপদ্রবে ছিলেন; সুতরাং, বিশেষ আস্থা না থাকাতে, তাঁহাদের দুর্গ একপ্রকার নষ্ট হইয়া গিয়াছিল। তাঁহারা আপনাদিগকে এত নিঃশঙ্ক ভাবিয়াছিলেন যে, দুর্গপ্রাচীরের বহির্ভাগে বিংশতি ব্যামের মধ্যেও, অনেক গৃহ নির্মাণ করিয়াছিলেন। তৎকালে, দুর্গমধ্যে একশত সত্তর জন মাত্র সৈন্য ছিল; তন্মধ্যে কেবল ষাটি জন য়ুরোপীয়। বারুদ পুরাণ ও নিস্তেজ; কামান সকল মরিচা ধরা। এ দিকে, সিরাজ উদ্দৌলা, চল্লিশ পঞ্চাশ সহস্র সৈন্য ও উত্তম উত্তম কামান লইয়া, কলিকাতা আক্রমণ করিতে আসিতেছেন। ইঙ্গারেজেরা দেখিলেন, আক্রমণ নিবারণের কোনও সম্ভাবনা নাই; অতএব, সন্ধি প্রার্থনায়, বারংবার পত্র প্রেরণ করিতে লাগিলেন, এবং বহুসংখ্যক মুদ্রা প্রদানেরও প্রস্তাব করিলেন। কিন্তু, নবাবের অন্য কোনও বিষয়ে কর্ণ দিতে ইচ্ছা ছিল না; তিনি ইঙ্গরেজদিগকে এক বারে উচ্ছিন্ন