করিবার মানস করিয়াছিলেন; অতএব, পত্রের কোনও উত্তর না দিয়া, অবিশ্রামে কলিকাতা অভিমুখে আসিতে লাগিলেন।
১৬ই জুন, তাঁহার সৈন্যের অগ্রসর ভাগ চিতপুরে উপস্থিত হইল। ইঙ্গরেজেরা, ইতঃপূর্ব্বে, তথায় এক উপদুর্গ প্রস্তুত করিয়া রাখিয়াছিলেন। তথা হইতে তাঁহারা, নবাবের সৈন্যের উপর, এমন ভয়ানক গোলাবৃষ্টি করিতে লাগিলেন যে, তাহারা, হটিয়া গিয়া, দমদমায় অবস্থিতি করিল।
নবাবের সৈন্যেরা, ১৭ই জুন, নগর বেষ্টন করিয়া, তৎপর দিন, এক কালে চারি দিকে আক্রমণ করিল। তাহারা, ভিত্তির সন্নিহিত গৃহ সকল অধিকার করিয়া, এমন ভয়ানক গোলাবৃষ্টি করিতে লাগিল যে, এক ব্যক্তিও, সাহস করিয়া, গড়ের উপর দাঁড়াইতে পারিল না। ঐ দিবস, অনেক ব্যক্তি হত ও অনেক ব্যক্তি আহত হইল, এবং দুর্গের বহির্ভাগ বিপক্ষের হস্তগত হওয়াতে, ইঙ্গরেজদিগকে দুর্গের অভ্যন্তর ভাগে প্রবেশ করিতে হইল। রাত্রিতে, বিপক্ষেরা দুর্গের চতুঃপার্শ্ববর্ত্তী অতি বৃহৎ কতিপয় গৃহে অগ্নি প্রদান করিল; ঐ সকল গৃহ অতি ভয়ানক রূপে জ্বলিত হইতে লাগিল।
অতঃপর কি করা উচিত, ইহার বিবেচনা করিবার নিমিত্ত, দুর্গস্থিত ইঙ্গারেজেরা একত্র সমবেত হইলেন। তৎকালীন সেনাপতিদিগের মধ্যে এক ব্যক্তিও কার্য্যজ্ঞ ছিলেন না। তাঁহারা সকলে কহিলেন, পলায়ন ব্যতিরেকে পরিত্রাণ নাই। বিশেষতঃ, এত অধিক এতদেশীয় লোক দুর্গ মধ্যে আশ্রয় লইয়াছিল যে, তন্মধ্যে যে আহারসামগ্রী ছিল, তাহাতে এক সপ্তাহ চলিতে পারিত না। অতএব নির্দ্ধারিত হইল, গড়ের নিকট যে সকল নৌকা প্রস্তুত আছে, পর দিন প্রত্যুষে, নগর পরিত্যাগ করিয়া, তদ্দ্বারা পলায়ন করাই শ্রেয়ঃ। কিন্তু, দুর্গ মধ্যে, এক ব্যক্তিও এমন ক্ষমতাপন্ন ছিলেন না যে, এই ব্যাপার সুশৃঙ্খল রূপে সম্পন্ন করিয়া উঠেন। সকলেই আজ্ঞাপ্রদানে উদ্যত; কেহই আজ্ঞাপ্রতিপালনে সম্মত নহে।
নিরূপিত সময় উপস্থিত হইলে, প্রথমতঃ স্ত্রীলোক সকল প্রেরিত হইলেন। অনন্তর, দুর্গস্থিত সমুদয় লোক ও নাবিকগণ ভয়ে অতিশয় অভিভূত হইল। সকল ব্যক্তিই তীরাভিমুখে ধাবমান। নাবিকেরা নৌকা লইয়া পলাইতে উদ্যত। ফলতঃ, সকলেই আপন লইয়া ব্যস্ত। যে, যে নৌকা সম্মুখে পাইল, তাহাতেই আরোহণ করিল। সর্ব্বাধ্যক্ষ ড্রেক সাহেব, ও সৈন্যাধ্যক্ষ সাহেব, সর্ব্ববাগ্রে পলায়ন করিলেন। যে কয়েক খান নৌকা উপস্থিত ছিল, কয়েক মুহুর্তের মধ্যে, কতক জাহাজের নিকটে, কতক হাবড়া