পারে, চলিয়া গেল; কিন্তু, সৈন্য ও ভদ্র লোক অৰ্দ্ধেকেরও অধিক দুর্গ মধ্যে রহিয়া গেল।
সর্ব্বাধ্যক্ষ সাহেবের পলায়নসংবাদ প্রচারিত হইবা মাত্র, অবশিষ্ট ব্যক্তিরা, একত্র সমবেত হইয়া, হলওয়েল সাহেবকে আপনাদের অধ্যক্ষ স্থির করিলেন। পলায়িতেরা, জাহাজে আরোহণ করিয়া, প্রায় এক ক্রোশ ভাটিয়া গিয়া, নদীতে নঙ্গর করিয়া রহিল। ১৯এ জুন, নবাবের সৈন্যেরা পুনর্বার আক্রমণ করিল; কিন্তু পরিশেষে অপসারিত হইল।
দুৰ্গবাসীরা, দুই দিবস পর্য্যন্ত, আপনাদের রক্ষা করিল, এবং জাহাজস্থিত লোকদিগকে অনবরত এই সঙ্কেত করিতে লাগিল, তোমরা আসিয়া আমাদের উদ্ধার কর। এই উদ্ধারক্রিয়া অনায়াসে সম্পন্ন হইতে পারিত। কিন্তু, পলায়িত ব্যক্তিরা, পরিত্যক্ত ব্যক্তিদিগের উদ্ধারার্থে, এক বারও উদ্যোগ করিল না। যাহা হউক, তখনও তাহাদের অন্য এক আশা ছিল। রয়েল জর্জ নামে এক খান জাহাজ, চিতপুরের নীচে, নঙ্গর করিয়া ছিল। হলওয়েল সাহেব, ঐ জাহাজ গড়ের নিকটে আনিবার নিমিত্ত, দুই জন ভদ্র লোককে পাঠাইয়া দিলেন; দুর্ভাগ্যক্রমে, উহা আসিবার সময় চড়ায় লাগিয়া গেল। এই রূপে, দুর্গস্থিত হতভাগ্যদিগের শেষ আশাও উচ্ছিন্ন হইল।
১৯এ জুন, রাত্রিতে, নবাবের সৈন্যেরা, দুর্গের চতুর্দ্দিকস্থ অবশিষ্ট গৃহ সকলে অগ্নি প্রদান করিয়া, ২০এ, পুনর্বার, পূর্ব্বাপেক্ষা অধিকতর পরাক্রম সহকারে, আক্রমণ করিল। হলওয়েল সাহেব, আর নিবারণচেষ্টা করা ব্যর্থ বুঝিয়া, নবাবের সেনাপতি মাণিকচাঁদের নিকট পত্র দ্বারা সন্ধির প্রার্থনা করিলেন। দুই প্রহর চারিটার সময়, নবাবের পক্ষের এক সৈনিক পুরুষ, কামান ৰন্ধ করিতে সঙ্কেত করিল। তদনুসারে, ইঙ্গারেজেরা, সেনাপতির উত্তর আসিল ভাবিয়া, আপনাদের কামান ছোড়া রহিত করিলেন। তাঁহার এইরূপ করিবা মাত্র, বিপক্ষেরা প্রাচীরের নিকট দৌঁড়িয়া আসিল; প্রাচীর লঙ্ঘন করিয়া দুৰ্গ মধ্যে প্রবেশ করিতে লাগিল; এবং, তৎপরে এক ঘণ্টার মধ্যে, দুর্গ অধিকার করিয়া, লুঠ আরম্ভ করিল।
বেলা পাঁচটার সময়, সিরাজ উদ্দৌলা, চৌপালায় চড়িয়া, দুর্গ মধ্যে উপস্থিত হইলে, য়ুরোপীয়েরা তাঁহার সম্মুখে নীত হইল। হলওয়েল সাহেবের দুই হস্ত বদ্ধ ছিল, নবাব, খুলিয়া দিতে আজ্ঞা দিয়া, তাঁহাকে এই বলিয়া আশ্বাস প্রদান করিলেন, তোমার একটি কেশও স্পৃষ্ট হইবেক না; অনন্তর, বিস্ময় প্রকাশ পূর্ব্বক কহিলেন, এত অল্পসংখ্যক ব্যক্তি, কি রূপে, চারি শত গুণ অধিক সৈন্যের সহিত, এত ক্ষণ যুদ্ধ করিল। পরে, এক অনাবৃত