পরিপাটী ছিল না। প্রত্যেক সেনাপতি, আপন আপন সুবিধা অনুসারে, পৃথক পৃথক স্থানে সেনা নিবেশিত করিলেন।
সিরাজ উদ্দৌলার সৈন্য, ঐ জলার সম্মুখে উপস্থিত হইয়া, সকতজঙ্গের সৈন্যের উপর গোলা চালাইতে লাগিল। বড় বড় কামানের গোলাতে তদীয় সৈন্য ছিন্নভিন্ন হইলে, তিনি, নিতান্ত উন্মত্তের ন্যায়, স্বীয় অশ্বারোহীদিগকে, জলা পার হইয়া, বিপক্ষসৈন্য আক্রমণ করিতে আজ্ঞা দিলেন। তাহারা, অতি কষ্টে কর্দ্দম পার হইয়া, শুষ্ক স্থানে উপস্থিত হইবা মাত্র, সিরাজ উদ্দৌলার সৈন্য অতি ভয়ানক রূপে তাহাদিগকে আক্রমণ করিল।
ঘোরতর যুদ্ধ হইতেছে, এমন সময়ে, সকতজঙ্গ স্বীয় শিবিরে প্রবেশ করিলেন, এবং, অত্যধিক সুরাপান করিয়া, এমন মত্ত হইলেন যে, আর সোজা হইয়া বসিতে পারেন না। তাঁহার সেনাপতিরা আসিয়া তাঁহাকে, রণস্থলে উপস্থিত থাকিবার নিমিত্ত, অতিশয় অনুরোধ করিতে লাগিলেন; পরিশেষে, ধরিয়া থাকিবার নিমিত্ত এক ভৃত্য সমেত, তাঁহাকে হস্তীতে আরোহণ করাইয়া, জলার প্রান্ত ভাগে উপস্থিত করিলেন। তথায় উপস্থিত হইবা মাত্র, শত্রুপক্ষ হইতে এক গোলা আসিয়া তাঁহার কপালে লাগিল। তিনি তৎক্ষণাৎ পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইলেন। সৈন্যেরা, তাঁহাকে প্রাণত্যাগ করিতে দেখিয়া, শ্রেণী ভঙ্গ পূর্ব্বক পলায়ন করিল। দুই দিবস পরে, নবাবের সেনাপতি মোহনলাল পূর্ণিয়া অধিকার করিলেন, এবং তথাকার ধনাগারে প্রাপ্ত ন্যূনাধিক নবতি লক্ষ টাকা ও সকতজঙ্গের যাবতীয় অন্তঃপুরিকাগণ মুরশিদাবাদে পঠাইয়া দিলেন।
সিরাজ উদ্দৌলা, সাহস করিয়া, যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত হইতে পারেন নাই; বস্তুতঃ, তিনি রাজমহলের অধিক যান নাই; কিন্তু, এই জয়ের সমুদয় বাহাদুরী আপনার বোধ করিয়া, মহাসমারোহে মুরশিদাবাদ প্রত্যাগমন করিলেন।
এ দিকে, ড্রেক সাহেব, কাপুরুষত্ব প্রদৰ্শন পূর্ব্বক, পলায়ন করিয়া, স্বীয় অনুচরবর্গের সহিত নদীমুখে জাহাজে অবস্থিতি করিতে লাগিলেন। তথায়, অনেক ব্যক্তি, রোগাভিভূত হইয়া, প্রাণত্যাগ করিল।
কলিকাতার দুর্ঘটনার সংবাদ মান্দ্রাজে পঁহুছিলে, তথাকার গবর্ণর ও কৌন্সিলের সাহেবেরা যৎপরোনাস্তি ব্যাকুল হইলেন, এবং চারি দিকে বিপদসাগর দেখিতে লাগিলেন। সেই সময়ে, ফরাসিদিগের সহিত ত্বরায় যুদ্ধ ঘটিবার সম্পূর্ণ সম্ভাবনা হইয়াছিল। ফরাসিরা তৎকালে পণ্ডিচরীতে অতিশয় প্রবল ছিলেন; ইঙ্গরেজদিগের