বিদ্যাসাগর-গ্ৰস্থাবলী—শিক্ষা
তিনি পুস্তক ফিরিয়া দিতে বলিলেন না, এবং ভূবনের শাসন, বা ভুবনকে চুরি করিতে নিষেধ, করিলেন না।
ইহাতে ভুবনের সাহস বাড়িয়া গেল। যত দিন বিদ্যালয়ে ছিল, সুযোগ পাইলেই, চুরি করিত। এইরূপে, ক্রমে ক্রমে সে বিলক্ষণ চোর হইয়া উঠিল। সকলেই জানিতে পারিল, ভুবন বড় চোর হইয়াছে। কাহারও কোনও দ্রব্য হারাইলে, সকলে তাহাকেই সন্দেহ করিত। যদি ভুবন অন্য লোকের বাটতে যাইত, পাছে সে কিছু চুরি করে, এই ভয়ে তাহারা অত্যন্ত সতর্ক হইত, এবং যথোচিত তিরস্কার ও প্রহার পর্য্যন্ত করিয়া, তাহাকে তাড়াইয়া দিত।
কিছু কাল পরে, ভুবন চোর বলিয়া ধরা পড়িল। সে বহু কাল চোর হইয়াছে এবং অনেকের অনেক দ্রব্য চুরি করিয়াছে, তাহা প্রমাণ হইল। বিচারকত্তা ভুবনের ফঁাসির আজ্ঞা দিলেন। তখন ভুবনের চৈতন্য হইল। যে স্থানে অপরাধীদের ফাসী হয়, তথায় লইয়া গেলে পর, ভুবন রাজপুরুষদিগকে কহিল, তোমরা দয়া করিয়া, এ জন্মের মত, এক বার আমার মাসীর সঙ্গে দেখা করাও ।
ভুবনের মাসী ঐ স্থানে আনীত হইলেন এবং ভূবনকে দেখিয়া, উচ্চৈঃস্বরে কাদিতে কাদিতে, তাহার নিকটে গেলেন। ভুবন কহিল, মাসি। এখন আর কাদিলে কি হইবে। নিকটে এস, কানে কানে তোমায় একটি কথা বলিব। মাস নিকটে গেলে পর, ভুবন তাহার কানের নিকটে মুখ লইয়া গেল এবং জোরে কামড়াইয়া, দাত দিয়া তাহার একটা কান কাটিয়া লইল। পরে ভৎসনা করিয়া কহিল, মাসি! তুমিই আমার এই ফাসির কারণ। যখন আমি প্রথম চুরি করিয়াছিলাম, তুমি জানিতে পারিয়াছিলে। সে সময়ে যদি তুমি শাসন ও নিবারণ করিতে, তাহা হইলে আমার এ দশা ঘটিত না। তাহা কর নাই, এজন্য তোমার এই পুরস্কার হইল।
সম্পূর্ণ