পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩২৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৩০৪ বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা ময়ুরগণ, দেখিবা মাত্র, তাহাকে দাড়কাক বলিয়া বুঝিতে পারিল ; সকলে মিলিয়া, তাহার পাখা হইতে, একটি একটি করিয়া, ময়ূরপুচ্ছ গুলি তুলিয়া লইল ; এবং, তাহাকে নিতান্ত অপদার্থ স্থির করিয়া, এত ঠোকরাইতে আরম্ভ করিল যে, দাড়কাক, জ্বালায় অস্থির হইয়া, পলায়ন করিল। অনন্তর, সে পুনরায় আপন দলে মিলিতে গেল। তখন, দাড়কাকের উপহাস করিয়া কহিল, অরে নিৰ্ব্বোধ ! তুই ময়ূরপুচ্ছ পাইয়া, অহঙ্কারে মত্ত হইয়া, আমাদিগকে ঘৃণা করিয়া ও গালাগালি দিয়া, ময়ূরের দলে মিলিতে গিয়াছিলি ; সেখানে অপদস্থ হইয়া, আবার আমাদের দলে মিলিতে আসিয়াছিস । তুই অতি নির্লজ্জ । এই রূপে, যথোচিত তিরস্কার করিয়া, তাহারা সেই নিৰ্ব্বোধ দাড়কাককে তাড়াইয়া দিল । যাহার যে অবস্থা, সে যদি তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহা হইলে, তাহাকে কাহারও নিকট অপদস্থ ও অবমানিত হইতে হয় না । শিকারি কুকুর এক ব্যক্তির একটি অতি উত্তম শিকারি কুকুর ছিল। তিনি যখন শিকার করিতে যাইতেন, কুকুরটি সঙ্গে থাকিত। ঐ কুকুরের বিলক্ষণ বল ছিল ; শিকারের সময়, কোনও জন্তুকে দেখাইয়া দিলে, সে সেই জন্তুর ঘাড়ে এমন কামড়াইয়া ধরিত যে, উহা অার পলাইতে পারিত না । যত দিন তাহার শরীরে বল ছিল, সে, এই রূপে, আপন প্রভুর যথেষ্ট উপকার করিয়াছিল। কালক্রমে, ঐ কুকুর, বৃদ্ধ হইয়া, অতিশয় দুৰ্ব্বল হইয়া পড়িল। এই সময়ে, তাহার প্রভু, এক দিন, তাহাকে সঙ্গে লইয়া, শিকার করিতে গেলেন। এক শূকর, তাহার সম্মুখ হইতে, দৌড়িয়া পলাইতে লাগিল। শিকারি ব্যক্তি ইঙ্গিত করিব মাত্র, কুকুর, প্রাণপণে দৌড়িয়া গিয়া, শূকরের ঘাড়ে কামড়াইয়া ধরিল ; কিন্তু, পূর্বের মত বল ছিল না, এজন্য, ধরিয়া রাখিতে পারিল না ; শূকর অনায়াসে ছাড়াইয়া চলিয়া গেল। শিকারি ব্যক্তি, ক্রোধে অন্ধ হইয়া, কুকুরকে তিরস্কার ও প্রহার করিতে আরম্ভ করিলেন। তখন কুকুর কহিল, মহাশয় । বিনা অপরাধে, আমায় তিরস্কার ও প্রহার করেন কেন। মনে করিয়া দেখুন, যত দিন আমার বল ছিল, প্রাণপণে, আপনকার কত