পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৪৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রোগী ও চিকিৎসক কোনও চিকিৎসক, কিছু দিন, এক রোগীর চিকিৎসা করিয়াছিলেন। সেই চিকিৎসকের হস্তেই, ঐ রোগীর মৃত্যু হয়। তাহার অস্ত্যেষ্টি ক্রিয়ার সময়, চিকিৎসক, তাহার আত্মীয়গণের নিকটে উপস্থিত হইয়া, আক্ষেপ করিয়া কহিলেন, আহা ! যদি এই ব্যক্তি আহারাদির নিয়ম করিয়া চলিতেন, সৰ্ব্বদা সকল বিষয়ে অত্যাচার না করিতেন, তাহা হইলে, ইহার অকালে মৃত্যু ঘটিত না । তখন মৃত ব্যক্তির এক আত্মীয় কহিলেন, কবিরাজ মহাশয়! আপনি যাহা আজ্ঞা করিতেছেন, তাহ যথার্থ বটে। কিন্তু, এক্ষণে, আপনকার এ উপদেশের কোনও ফল দেখিতেছি না। যখন সে ব্যক্তি জীবিত ছিলেন, এবং, আপনকার উপদেশ অনুসারে, চলিতে পারিতেন, তখন র্তাহাকে এরূপ উপদেশ দেওয়া উচিত ছিল। সময় বহিয়া গেলে উপদেশ দেওয়া বৃথা । ইদুরের পরামর্শ ইহুর সকল, বিড়ালের উপদ্রবে, নিতান্ত বিব্রত হইয়া, সকলে একত্র হইয়া, কিসে পরিত্রাণ হয়, এই পরামর্শ করিতে বসিল। যাহার মনে যাহা উপস্থিত হইল, সে তাহাই কহিতে লাগিল ; কিন্তু, কোনও প্রস্তাবই পরামর্শসিদ্ধ বোধ হইল না। পরিশেষে, এক বুদ্ধিমান ইছর কহিল, বিড়ালের গলায় একটা ঘণ্টা বাধিয়া দেওয়া যাউক । ঘণ্টার শব্দ হইলে, আমরা বুঝিতে পারিব, বিড়াল আমাদিগকে খাইতে আসিতেছে ; তাহা হইলেই, আমরা সাবধান হইতে পারিব । এই প্রস্তাব শুনিয়া, সকলে ধন্য ধন্ত করিতে লাগিল ; এবং, সকলের মতে, উহাই কৰ্ত্তব্য বলিয়। স্থির হইল। এক বৃদ্ধ ইছর, এ পর্য্যন্ত চুপ করিয়া বসিয়া ছিল। সে বলিল, অমুক যাহা কহিলেন, তাহ বিলক্ষণ বুদ্ধির কথা বটে ; এবং, সেরূপ করিতে পারিলে, আমাদের ইষ্টসিদ্ধিও হইতে পারে। কিন্তু, আমি এই জিজ্ঞাসা করিতেছি, আমাদের মধ্যে কে, সাহস করিয়া, বিড়ালের গলায় ঘণ্টা বাধিতে যাইবেক । ইহা শুনিয়া, পরস্পর মুখ চাহিয়া, সকলে হতবুদ্ধি ও স্তব্ধ হইয়া রহিল। কোনও বিষয়ের প্রস্তাব করা সহজ, কিন্তু নিৰ্ব্বাহ করিয়া উঠা কঠিন।