পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কথামালা \లరిy দিন, মধ্যাহ্ন সময়ে, সে, কাঠের বোঝা মাথায় করিয়া, বন হইতে আসিতেছে। ক্ষুধায় পেট জ্বলিতেছে ; তৃষ্ণায় ছাতি ফাটিতেছে ; প্রখর রৌদ্রে সৰ্ব্ব শরীর দগ্ধপ্রায় ও গলদঘৰ্ম্ম হইতেছে ; পথের তপ্ত ধূলি ও বালুকাতে, দুই পা পুড়িয়া যাইতেছে। অবশেষে, নিতান্ত ক্লাস্ত হইয়া, কাঠের বোঝা ফেলিয়া, সে এক বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম করিতে বসিল । কিয়ৎক্ষণ পরে, সে মনে মনে কহিতে লাগিল, এরূপ ক্লেশভোগ করিয়া বাচিয়া থাকা অপেক্ষা, মরিয়া যাওয়া ভাল ; কেনই বা আমার মরণ হয় না ; আমার মত হতভাগ্য লোকের মরণ হইলেই মঙ্গল । মনের দুঃখে, এইরূপ আক্ষেপ করিয়া, সেই চিরতুঃখী, যমকে সম্বোধিয়া, কহিতে লাগিল, যম! তুমি আমায় ভুলিয়া আছ কেন ? শীঘ্ৰ আসিয়া, আমায় লইয়া যাও ; তাহা হইলেই আমার নিস্কৃতি হয় ; আর আমি ক্লেশ সহ করিতে পারি না। তাহার কথা সমাপ্ত না হইতেই, যম আসিয়া তাহার সম্মুখে দাড়াইলেন। সে, তাহার বিকট মূৰ্ত্তি দেখিয়া, ভয় পাইয়া, জিজ্ঞাসা করিল, আপনি কে, কি জন্যে এখানে আসিলেন ? তিনি কহিলেন, আমি যম, তুমি আমায় ডাকিতেছিলে, তাই আসিয়াছি ; এখন, কি জন্তে আমায় ডাকিতেছিলে, বল। তখন সে কহিল, মহাশয়! যদি আসিয়াছেন, তবে দয়া করিয়া, কাঠের বোঝাটি আমার মাথায় উঠাইয়া দেন, তাহ হইলে, আমার যথেষ্ট উপকার হয়। যম, শুনিয়া, ঈষৎ হাসিয়া, অন্তহিত হইলেন। পক্ষী ও শাকুনিক এক শাকুনিক, ফাদ পাতিয়া, এক পক্ষী ধরিয়াছিল। পক্ষী, প্রাণনাশ উপস্থিত দেখিয়া, কাতর হইয়া, বিনয়বাক্যে শাকুনিককে কহিতে লাগিল, ভাই ! তুমি, দয়। করিয়া, আমায় ছাড়িয়া দাও । আমি তোমার নিকট অঙ্গীকার করিতেছি, আমায় ছাড়িয়া দিলে, আমি অন্য অন্ত পক্ষীদিগকে, ভুলাইয়া আনিয়া, তোমার ফঁাদে ফেলিয়া দিব। বিবেচনা করিয়া দেখ, তুমি, এক পক্ষীর পরিবর্তে, কত পক্ষ পাইবে । শাকুনিক কহিল, না, আমি তোমায় ছাড়িয়া দিব না। যে, আপন মঙ্গলের নিমিত্ত, সজাতীয় ও আত্মীয় দিগের সর্বনাশ করিতে পারে, তাহার মৃত্যু হইলেই, পৃথিবীর মঙ্গল ।