পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৩৭১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিধবা ও কুকুট কোনও গ্রামে এক দরিদ্র মুসলমান বিধবা বাস করিত। সে কয়ে কুকুট পুষিয়াছিল। কুকুটীর প্রত্যহ যে ডিম পাড়িত, সে ঐ ডিম লইয়া নিকটস্থ হাটে বিক্রয় করিত। বিক্রয়লব্ধ অর্থ হইতে সে কায়ক্লেশে জীবিকা অর্জন করিত। সকল কুকুট অপেক্ষ একটা কুকুটকে ঐ দরিদ্র রমণী ভালবাসিত, কারণ ঐ কুকুট প্রত্যহ প্রভাতে একটি করিয়া ডিম পাড়িত। বিধবা এই জন্য উহাকে অন্যান্য কুকুট অপেক্ষা প্রত্যহ অধিক ধান খাইতে দিত। একদিন বিধবা ভাবিল, যদি ঐ সামান্ত ধান খাইয়া কুকুট প্রত্যহ একটা করিয়া ডিম পাড়ে, তাহা হইলে যদি সে প্রত্যন্ত উহার আহারের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করিয়া দেয়, তাহা হইলে কুকুট নিশ্চিতই প্রত্যহ দুইটা করিয়া ডিম পাড়িবে, আর তাহ হইলে, সে সেই ডিম বিক্রয় করিয়া দ্বিগুণ অর্থ সঞ্চয় করিতে পারিবে । ভবিষ্যতে অধিক অর্থ উপার্জন করিতে পারিবে এই আশায় উৎফুল্ল হইয়া, বিধবা সেই দিন হইতে সেই প্রিয় কুকুটীর আহারের পরিমাণ দ্বিগুণ বৃদ্ধি করিয়া দিল। প্রথম দুই তিন দিন কুকুটা পূৰ্ব্ববং ডিম পাড়িল। কিন্তু তাহার পর অধিক আহারের ফলে ক্রমে যতই হৃষ্টপুষ্ট হইতে লাগিল, ততই দুই এক দিন অন্তর ডিম পাড়িতে লাগিল। শেষে কুকুট এত অধিক হৃষ্টপুষ্ট হইয়া পড়িল যে, একেবারে ডিম পাড়া বন্ধ করিয়া দিল। তখন বিধবা কপালে করাঘাত করিয়া বলিল, হায়! আমি বুদ্ধির দোষে লোভ করিতে গিয়া সব হারাইলাম । অতি লোভ অনেক সময় অনিষ্টকর হইয়া থাকে। ভল্লুক ও শৃগাল কোনও বনে এক ভল্লুক ও এক শৃগাল বাস করিত। উহাদের উভয়ের মধ্যে বন্ধুত্ব ছিল। একদিন উভয়ে বনে ইচ্ছামত বিচরণ করিতে করিতে এক নদীতটস্থ শ্মশান ভূমিতে উপস্থিত হইল। উহার পূর্বদিন নিকটস্থ পল্লীবাসীরা ঐ শ্মশানে তাহাদের এক মৃত আত্মীয়কে দাহ করিতে আসিয়াছিল। দাহকালে তুমুল ঝড়বৃষ্টি হওয়ায়, তাহার