পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৪১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গালার ইতিহাস—দ্বিতীয় ভাগ ని প্রথমতঃ তাহাদের সিদ্ধান্তই গ্রাহ করিয়াছিলেন ; কিন্তু, পরিশেষে, অভিনিবেশ পূৰ্ব্বক বিবেচনা করিয়া, ভাগ্যে যাহা থাকে ভাবিয়া, যুদ্ধপক্ষই অবলম্বন করিলেন। তিনি স্থির বুঝিয়াছিলেন, যদি, এত দূর আসিয়া, এখন ফিরিয়া যাই, তাহ হইলে, বাঙ্গালাতে ইঙ্গরেজদিগের অভু্যদয়ের আশা এক বারে উচ্ছিন্ন হইবেক । ২২এ জুন, সূর্য্যোদয় কালে, সৈন্ত সকল গঙ্গা পার হইতে আরম্ভ করিল। দুই প্রহর চারিটার সময়, সমুদয় সৈন্ত অপর পারে উত্তীর্ণ হইল। তাহার, অবিশ্রান্ত গমন করিয়া, রাত্রি দুই প্রহর একটার সময়, পলাশির বাগানে উপস্থিত হইল । প্রভাত হইবা মাত্র, যুদ্ধ আরব্ধ হইল। ক্লাইব, উৎকণ্ঠিত চিত্তে, মীর জাফরের ও তদীয় সৈন্তের আগমন প্রতীক্ষা করিতে লাগিলেন। কিন্তু, তখন পূৰ্য্যন্ত, তাহার ও তদীয় সৈন্তের কোনও চিহ্ন দেখা গেল না। যুদ্ধক্ষেত্রে নবাবের পঞ্চদশ সহস্ৰ অশ্বারোহ ও পঞ্চত্রিংশৎ সহস্র পদাতি সৈন্য উপস্থিত হইয়াছিল। কিন্তু তিনি স্বয়ং, চাটুকারবর্গে বেষ্টিত হইয়া, সকলের পশ্চাদ্ভাগে তাবুর মধ্যে ছিলেন । মীর মদন নামক এক জন সেনাপতি যুদ্ধে প্রবৃত্ত হইয়াছিলেন । মীর জাফর, আত্মসৈন্ত সহিত, তথায় উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু যুদ্ধে প্রবৃত্ত হয়েন নাই । বেলা প্রায় দুই প্রহরের সময়, কামানের গোলা লাগিয়া, সেনাপতি মীর মদনের দুই পা উড়িয়া গেল। তিনি তৎক্ষণাৎ নবাবের তাবুতে নীত হইলেন এবং র্তাহার সম্মুখেই প্রাণত্যাগ করিলেন। তদৃষ্টে নবাব যৎপরোনাস্তি ব্যাকুল হইলেন, এবং ভূতাদিগকে বিশ্বাসঘাতক বলিয়া সন্দেহ করিতে লাগিলেন। তখন, তিনি মীর জাফরকে ডাকাইয়া আনিলেন, এব। তাহার চরণে স্বীয় উষ্ণীষ স্থাপিত করিয়া, অতিশয় দীনতা প্রদর্শন পূর্বক, এই প্রার্থনা করিতে লাগিলেন যে, অন্ততঃ আমার মাতামহের অনুরোধে, আমার অপরাধ ক্ষমা করিয়া, এই বিষম বিপদের সময়, সহায়তা কর । জাফর অঙ্গীকার করিলেন, আমি আত্মধৰ্ম্ম প্রতিপালন করিব ; এবং, তাহার প্রমাণ স্বরূপ, নবাবকে পরামর্শ দিলেন, অদ্য বেলা অত্যন্ত অধিক হইয়াছে, সৈন্ত সকল ফিরাইয়া আমুন। যদি জগদীশ্বর কৃপা করেন, কল্য আমরা, সমুদয় সৈন্ত একত্র করিয়া, যুদ্ধার্থে প্রস্তুত হইব। তদনুসারে, নবাব সেনাপতিদিগকে যুদ্ধ হইতে নিবৃত্ত হইবার আজ্ঞা পাঠাইলেন। নবাবের অপর সেনাপতি মোহনলাল ইঙ্গরেজদিগের সহিত ঘোরতর যুদ্ধ করিতেছিলেন ; কিন্তু, নবাবের এই আজ্ঞা পাইয়া, নিতান্ত অনিচ্ছা পূৰ্ব্বক নিবৃত্ত হইলেন। তিনি অকস্মাৎ ক্ষান্ত হওয়াতে, সৈন্যদিগের উৎসাহভঙ্গ হইল। তাহার, ভঙ্গ