న రి বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা দিয়া, চারি দিকে পলায়ন করিতে আরম্ভ করিল। সুতরাং, ক্লাইবের অনায়াসে সম্পূর্ণ জয়লাভ হইল। যদি মীর জাফর বিশ্বাসঘাতক না হইতেন, এবং ঈদৃশ সময়ে এরূপ প্রতারণা না করিতেন, তাহা হইলে, ক্লাইবের, কোনও ক্রমে, জয়লাভের সম্ভাবনা ছিল না । তদনন্তর, সিরাজ উদ্দৌলা, এক উষ্ট্রে আরোহণ করিয়া, দুই সহস্ৰ অশ্বারোহ সমভিব্যাহারে, সমস্ত রাত্রি গমন করত, পর দিন বেলা ৮টার সময়, মুরশিদাবাদে উপস্থিত হইলেন, এবং উপস্থিত হইয়াই, আপনার প্রধান প্রধান ভূত্য ও অমাত্যবর্গকে সন্নিধানে আসিতে আজ্ঞা করিলেন। কিন্তু তাহারা সকলেই স্ব স্ব আলয়ে প্রস্থান করিল। অন্তের কথা দূরে থাকুক, সে সময়ে, তাহার শ্বশুর পর্য্যন্ত তাহাকে পরিত্যাগ করিয়াছিলেন। নবাব, সমস্ত দিন, একাকী আপন প্রাসাদে কালযাপন করিলেন ; পরিশেষে, নিতান্ত হতাশ হইয়া, রাত্রি তিনটার সময়ে, মহিষীগণ ও কতিপয় প্রিয়পাত্র সমভিব্যাহারে করিয়া, শকটারোহণ পূর্বক, ভগবানগোলায় পলায়ন করিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া, ফরাসি সেনাপতি লা সাহেবের সহিত মিলিত হইবার নিমিত্ত, তিনি নৌকারোহণ পূৰ্ব্বক জলপথে প্রস্থান করিলেন। ইতঃপূৰ্ব্বে, তিনি, ঐ সেনাপতিকে পাটনা হইতে আসিতে পত্র লিখিয়াছিলেন । পলাশির যুদ্ধে ইঙ্গরেজদিগের, হত আহত সমুদয়ে, কেবল কুড়ি জন গোর ও পঞ্চাশ জন সিপাই নষ্ট হয়। যুদ্ধসমাপ্তির পর, মীর জাফর, ক্লাইবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া, তাহার রণজয় নিমিত্ত সভাজন ও হর্ষপ্রদর্শন করিলেন। অনন্তর, উভয়ে একত্র হইয়া মুরশিদাবাদ চলিলেন। তথায় উপস্থিত হইয়া, মীর জাফর রাজকীয় প্রাসাদ অধিকার করিলেন । রাজধানীর প্রধান প্রধান লোক ও প্রধান প্রধান রাজকীয় কৰ্ম্মচারী সমবেত হইলেন। অবিলম্বে এক দরবার হইল। ক্লাইব, আসন হইতে গাত্ৰোখান করিয়া, মীর জাফরের কর গ্রহণ পূর্বক সিংহাসনে বসাইয়া, তাহাকে বাঙ্গাল, বিহার, উড়িষ্যার নবাব বলিয়া সম্ভাষণ ও বন্দনা করিলেন । তৎপরে তাহারা উভয়ে, কয়েক জন ইঙ্গরেজ এবং ক্লাইবের দেওয়ান রামর্চাদ ও র্তাহার মুন্সী নবকৃষ্ণকে সঙ্গে লইয়া, ধনাগারে প্রবেশ করিলেন ; কিন্তু, তন্মধ্যে স্বর্ণ ও রৌপ্য উভয়ে দুই কোটি টাকার অধিক দেখিতে পাইলেন না। তৎকালের মুসলমান ইতিহাসলেখক কহেন যে, উহা কেবল বাহ ধনাগার মাত্র। এতদ্ভিন্ন, অস্তঃপুরে আর এক ধনাগার ছিল ; ক্লাইব, তাহার কিছু মাত্র সন্ধান পান নাই।
পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৪২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।