পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৪৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আখ্যানমঞ্জরী-প্রথম ভাগ 85& জাহাজ হইতে যত গুলি মারিয়াছিল, তাহার একটিও হাঙ্গরের গায় লাগিল না। হাঙ্গর, ক্রমে ক্রমে সন্নিহিত হইয়া, মুখবাদানপুৰ্ব্বক, বেকনরকে আক্রমণ করিতে উদ্যত হইল ; তাহার পুত্র অতিশয় পিতৃভক্ত ছিল। সে, পিতার প্রাণনাশের উপক্রম দেখিয়া, এক তীক্ষ্ণধার তরবারি লইয়া, সমুদ্রে ঝম্পপ্রদান করিল, এবং দ্রুতবেগে হাঙ্গরের দিকে গমন করিয়া, উহার উদরে তরবারি প্রবেশ করাইয়া দিল। তখন হাঙ্গর, কুপিত হইয়া, তাহাকে আক্রমণ করিতে উদ্যত হইল। কিন্তু সে সন্তরণকৌশলে, হাঙ্গরের আক্রমণ এড়াইয়া, উহার কলেবরে উপযুপিরি তরবারির আঘাত করিতে লাগিল । এই অবকাশে জাহাজের উপরিস্থ লোকের কতিপয় রজু ঝুলাইয়া দিল । পিতাপুত্রে এক এক রজ্জ্ব অবলম্বন করিলে, তাহারা টানিয়া উহাদিগকে জল হইতে কিঞ্চিৎ উদ্ধে উঠাইল । এই সময়ে, উহাদের প্রাণরক্ষা হইল ভাবিয়া, সকলে আনন্দধ্বনি করিতে লাগিল। কিন্তু, সেই দুৰ্দ্দান্ত জন্তু, মুখব্যাদান ও উদ্ধে লম্ফপ্রদান পুৰ্ব্বক, বেকনরের পুত্রের কটিদেশ পর্য্যন্ত গ্রাস করিল ; এবং তৎক্ষণাৎ তীক্ষু দন্ত দ্বারা, গ্রস্ত অংশ কাটিয়া লইয়া, জলে পতিত হইল ; বালকের কলেবরের উদ্ধতন অৰ্দ্ধ অংশমাত্র রজুতে ঝুলিতে লাগিল । এই হৃদয়বিদারণ ব্যাপার দর্শনে, ব্যক্তি মাত্রেই হতবুদ্ধি ও জড়প্রায় হইয়া, কিয়ৎক্ষণ দণ্ডায়মান রহিল ; অনন্তর সকলেই, শোকে বিচলিত হইয়া, হাহাকার করিতে লাগিল । বেকনর, জাহাজে উত্তোলিত হইয়া, পুজের তাদৃশী দশ দেখিয়া, শোকে নিতান্ত বিহ্বল হইল। পাশ্ববৰ্ত্তী লোকের বলপূর্বক ধরিয়া না রাখিলে, সে নিঃসন্দেহ সমুদ্রে বাপ দিয়া প্রাণত্যাগ করিত। তাহার পুত্র, যতক্ষণ জীবিত ছিল, অবিচলিত ভাবে পিতার দিকে দৃষ্টিপাত করিয়া রহিল । আমার প্রাণ যাউক, কিন্তু পিতার প্রাণরক্ষা হইয়াছে, এই আহলাদে প্রফুল্ল বদনে, সে প্রাণত্যাগ করিল ; তাহার আকৃতি দেখিয়া সন্নিহিত ব্যক্তিমাত্রেরই এরূপ বোধ ও বিশ্বাস জন্মিয়াছিল । ভ্রাতৃস্নেহ যুরোপের অন্তঃপাতী সুইটজালগু দেশ পৰ্ব্বতে পরিপূর্ণ। ঐ সকল পৰ্ব্বতের শিখরভূমি নিরন্তর নীহারে আচ্ছন্ন থাকে ; এজন্য ঐ দেশে শীতের অতিশয় প্রাচুর্ভাব ।