२२ বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা ঐ ফকীরের উপর তিনি অনেক অত্যাচার করিয়াছিলেন। এক্ষণে ঐ ব্যক্তি র্তাহার অনুসন্ধানকারী:দিগকে তৎক্ষণাৎ তাহার পহুছসংবাদ দিলে, তাহারা আসিয়া তাহাকে রুদ্ধ করিল। সপ্তাহ পূৰ্ব্বে, তিনি ঐ সকল ব্যক্তির সহিত আলাপও করিতেন না ; এক্ষণে, অতি দীন বাক্যে, তাহাদের নিকট বিনয় করিতে লাগিলেন। কিন্তু তাহার, তদীয় বিনয়বাক্য শ্রবণে বধির হইয়া, তাহার সমস্ত স্বর্ণ ও রত্ন লুটিয়া লইল ; এবং তাহাকে মুরশিদাবাদে প্রত্যানয়ন করিল। যৎকালে, তিনি রাজধানীতে আনীত হইলেন, তখন মীর জাফর, অধিক মাত্রায় অহিফেন সেবন করিয়া, তন্দ্রবেশে ছিলেন ; তাহার পুত্ৰ পাপাত্মা মীরন, সিরাজ উদ্দৌলার উপস্থিতিসংবাদ শুনিয়া, তাহাকে আপন আলয়ের সন্নিধানে রুদ্ধ করিতে আজ্ঞা দিল, এবং দুই ঘণ্টার মধ্যেই, স্বীয় বয়স্তাগণের নিকট তাহার প্রাণবধের ভার লইবার প্রস্তাব করিল। কিন্তু, তাহারা একে একে সকলেই অস্বীকার করিল। মহম্মদিবেগ নামক এক ব্যক্তি আলিবর্দি খার নিকট প্রতিপালিত হইয়াছিল ; পরিশেষে সেই দুরাত্মাই এই নিষ্ঠুর ব্যাপারের সমাধানের ভারগ্রহণ করিল। সে ব্যক্তি গৃহে প্রবেশ করিব মাত্র, হতভাগ্য নবাব, তাহার আগমনের অভিসন্ধি বুঝিতে পারিয়া, করুণ স্বরে কহিলেন, আমি যে, বিনা অপরাধে, হুসেন কুলি খার প্রাণদণ্ড করিয়াছিলাম, তাহার প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আমায় অবষ্ঠাই প্রাণত্যাগ করিতে হইবেক । তিনি এই বাক্য উচ্চারণ করিব মাত্র, দুরাচার মহম্মদিবেগ তরবারি প্রহার দ্বারা তাহার মস্তকচ্ছেদন করিল। উপযুপিরি কতিপয় আঘাতের পর, তিনি, হুসেন কুলি খার প্রাণদণ্ডের প্রতিফল পাইলাম, এই বলিয়া, পঞ্চত প্রাপ্ত ও ভূতলে পতিত হইলেন। 象 অনন্তর, মীরনের আজ্ঞাবহেরা নবাবের মৃত দেহ খণ্ড খণ্ড করিল ; এবং, অযত্ন ও অবজ্ঞা পূর্বক, হস্তিপৃষ্ঠে নিক্ষিপ্ত করিয়া, জনাকীর্ণ রাজপথ দিয়া, গোর দিবার নিমিত্ত লইয়া চলিল। ঐ সময়ে, সকলে লক্ষ্য করিয়াছিল, কোনও কারণ বশতঃ, পথের মধ্যে মাহুতের থামিবার আবশ্বক হওয়াতে, আঠার মাস পূর্বে সিরাজ উদ্দৌলা যে স্থানে হুসেন কুলি খার প্রাণবধ করিয়াছিলেন, ঐ হস্তী ঠিক সেই স্থানে দণ্ডায়মান হয় ; এবং, যে ভূভাগে, বিনা অপরাধে, তিনি হুসেনের শোণিতপাত করিয়াছিলেন, ঠিক সেই স্থানে, তাহার খণ্ডিত কলেবর হইতে কতিপয় রুধিরবিন্দু নিপতিত হয়।
পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৪৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।