তৃতীয় অধ্যায় মীর জাফরের প্রভুত্ব এক কালে বাঙ্গাল, বিহার, উড়িষ্যা, তিন প্রদেশে অব্যাহত রূপে অঙ্গীকৃত হইল। কিন্তু, অতি অল্প কালেই, প্রকাশ পাইল, র্তাহার কিছু মাত্র বিষয়বুদ্ধি নাই। তিনি স্বভাবতঃ নির্বোধ, নিষ্ঠুর, ও অর্থলোভী ছিলেন। রাজ্যের প্রধান প্রধান হিন্দু কৰ্ম্মচারীরা, পূর্ব পূৰ্ব্ব নবাবদিগের অধিকার কালে, যথেষ্ট ধনসঞ্চয় করিয়াছিলেন। তিনি প্রথমতঃ, তাহদের সর্বস্বহরণ মনস্থ করিলেন। প্রধান মন্ত্রী রাজ রায় দুর্লভ কেবল বিলক্ষণ ধনবান ছিলেন, এমন নহে ; তাহার নিজের ছয় সহস্র সৈন্যও ছিল । মীর জাফর সর্ববাগ্রে তাহাকেই লক্ষ্য করিলেন । মীর জাফরকে সিংহাসনে নিবেশিত করিবার বিষয়ে, রাজ রায় দুর্লভ প্রধান উদ্যোগী ছিলেন। যখন সিরাজ উদ্দৌলাকে রাজ্যভ্রষ্ট করিবার নিমিত্ত চক্রান্ত হয়, রায় দুর্লভই চক্রান্তকারীদিগের নিকট প্রস্তাব করেন যে, মীর জাফরকে নবাব করা উচিত। তথাপি মীর জাফর, সৰ্ব্বাগ্রে, রায় তুলভের সৰ্ব্বনাশের চেষ্টায় প্রবৃত্ত হইলেন। ফলতঃ, তাহার উপর মীর জাফরের এমন বিদ্বেষ জন্মিয়াছিল যে, তাহার সহিত সিরাজ উদ্দৌলার কনিষ্ঠ ভ্রাতার বন্ধুতা আছে, এই সন্দেহ করিয়া, সেই অল্পবয়স্ক নিরপরাধ রাজকুমারের প্রাণবধ করিলেন। রায় দুর্লভও, কেবল ইঙ্গরেজদিগের শরণাগত হইয়া, সে যাত্রা পরিত্রাণ পাইলেন। রাজা রামনারায়ণ, বহুকাল অবধি, বিহারের ডেপুটি গবর্ণর ছিলেন। নবাব মনস্থ করিলেন, তাহাকে পদচ্যুত করিয়া, তদীয় সমুদয় সম্পত্তি অপহরণ করিবেন, ও আপন ভ্রাতাকে গবর্ণর পদ দিবেন। ক্লাইবের মতে, মীর জাফরের ভ্রাতা মীর জাফর অপেক্ষাও নিবোধ ছিলেন। নবাব মেদিনীপুরের গবর্ণর রাজা রাম সিংহের ভ্রাতাকে কারাগারে রুদ্ধ করিলেন ; তাহাতে রাম সিংহও তাহার প্রতি ভগ্নস্নেহ হইলেন। পূর্ণিয়ার ডেপুটি গবর্ণর অদল সিংহ, মন্ত্রীদিগের কুমন্ত্রণা অনুসারে, রাজবিদ্রোহে অভু্যত্থান করিলেন। এই রূপে, মীর জাফরের সিংহাসনারোহণের পর, পাচ মাসের মধ্যে, তিন প্রদেশে তিন বিদ্রোহ ঘটিল। তখন তিনি ব্যাকুল হইয়া, বিদ্রোহশান্তির নিমিত্ত, ক্লাইবের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করিলেন। তৎকালে ক্লাইব বাঙ্গালাতে সকলেরই বিশ্বাসভাজন ছিলেন। এই বিশ্বাস অপাত্রে বিন্যস্ত হয় নাই। তিনি, উপস্থিত তিন বিদ্রোহের শান্তি করিলেন, অথচ এক বিন্দু রক্তপাত হইল না।
পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৪৫
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।