যে অল্প কয়েক জন কীর্ত্তিমান পুরুষের ব্যক্তিগত সাধনায় বাংলা দেশ, বাঙালী সমাজ ও বাংলা সাহিত্য উনবিংশ শতাব্দীর অজ্ঞতা ও অশিক্ষার তমোজাল ছিন্ন করিয়া নবোদিত অরুণের মত দীপ্যমান হইয়া উঠিয়াছে, তাঁহাদের অন্যতম—ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর, মেদিনীপুরের সন্তান। তাঁহার জন্মস্থান বীরসিংহ গ্রামে অথবা মেদিনীপুর শহরে তাঁহার কীর্তির উপযোগী কোনও স্মৃতিরক্ষার ব্যবস্থা এত দিন হয় নাই। বিদ্যাসাগরের স্বদেশবাসী চিন্তাশীল ব্যক্তিগণের এই কারণে সঙ্কোচ ও লজ্জার অবধি ছিল না। সেই অপরিসীম লজ্জা অপনোদনের কথঞ্চিৎ প্রয়াস করিতেছেন বিদ্যাসাগর-স্মৃতি-সংরক্ষণসমিতি।
বঙ্গীয়-সাহিত্য-পরিষদের মেদিনীপুর-শাখার উদ্যোগে পুণ্যশ্লোক বিদ্যাসাগর মহাশয়ের বার্ষিক তিরোধান-দিবস, ১৩ই শ্রাবণ ১৩৪৪, তাঁহার জন্মস্থানে স্মৃতি-পূজার যে অনুষ্ঠান হয়, তাহাতে মেদিনীপুরের বহু জনহিতকর কর্মে অগ্রণী ম্যাজিস্টেট শ্রীযুক্ত বিনয়রঞ্জন সেন, আই. সি. এস. মহাশয়ের নেতৃত্বে এই সমিতি গঠিত হয় এবং তাঁহারই বিপুল প্রয়াসে এই সমিতির বহু পরিকল্পনার মধ্যে অন্যতম, বিদ্যাসাগর মহাশয়ের গ্রন্থাবলী, প্রকাশিত হইতেছে।
বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর মহাশয় নবযুগের সূচনা করিয়াছিলেন—তাঁহার গ্রন্থাবলী সেই যুগের সম্পদ। সেই গ্রন্থাবলীর সুসম্পাদিত সুশোভন সংস্করণ সহজলভ্য করিয়া সর্ব্বসাধারণকে নিবেদন করিবার সৌভাগ্য যাঁহাদের অর্থানুকূল্যে ও সম্পাদনায় সম্ভব হইল, তাঁহাদিগকে কৃতজ্ঞতা নিবেদন করিতেছি।
বাংলা সাহিত্যের একনিষ্ঠ সেবক খ্যাতনামা এই সাহিত্যিকত্রয় সম্পাদন-কার্যের ভার গ্রহণ না করিলে গ্রন্থাবলী-প্রকাশের পরিকল্পনা কল্পনায় পর্যবসিত হইত। বাংলা সাহিত্যে বিদ্যাসাগর মহাশয়ের সুযোগ্য উত্তরপুরুষ তাঁহারা—তাঁহাদিগের নিকট বাংলা সাহিত্য চিরঋণী থাকিবে।
এই পুস্তক মুদ্রণের বিপুল ব্যয়ভার সাহিত্যানুরাগী বিদ্যোৎসাহী ঝাড়গ্রামের জমিদার কুমার নরসিংহ মল্লদেব, বি. এ. মহাশয় স্বতঃপ্রণোদিত হইয়া বহন করিয়া যে মহৎপ্রাণতার পরিচয় দিয়াছেন, অধুনা তাহা অত্যন্ত দুর্লভ।