বাঙ্গালার ইতিহাস—দ্বিতীয় ভাগ WoGo পরিশোধ করিতে পারিব না ; আর, যাবৎ আপনাদের সৈন্ত পাটনাতে থাকিবেক, তাবৎ ঐ বাকীর আদায়ের কোনও সম্ভাবনা নাই । তৎকালে, কলিকাতার কোন্সিলে দুই পক্ষ ছিল ; এক পক্ষ মীর কাসিমের অনুকূল, অন্য পক্ষ তাহার প্রতিকূল ; গবর্ণর বান্সিটার্ট সাহেব অনুকূল পক্ষে ছিলেন। মীর কাসিমের প্রস্তাব লইয়া, উভয় পক্ষের বিস্তর বাদানুবাদ হইল। পরিশেষে বান্সিটার্টের পক্ষই প্রবল হইল। এই পক্ষের মত অনুসারে, ইঙ্গরেজের পাটনা হইতে আপনাদের সৈন্য উঠাইয়া আনিলেন ; সুতরাং, রামনারায়ণ নিতান্ত অসহায় হইলেন ; এবং, নবাবও তাহাকে রুদ্ধ ও কারাবদ্ধ করিতে কালবিলম্ব করিলেন না । গুপ্ত ধনাগার দেখাইয়া দিবীর নিমিত্ত, তাহার কৰ্ম্মচারীদিগকে অনেক যন্ত্রণ দেওয়া হইল ; কিন্তু, গবর্ণমেণ্টের আবশ্বক ব্যয়ের নিমিত্ত যাহা আবশ্যক, তদপেক্ষা অধিক টাকা পাওয়া গেল না । মীর কাসিম, এ পর্য্যন্ত, নিৰ্বিববাদে রাজ্যশাসন করিলেন। পরে তিনি, কোম্পানির কৰ্ম্মকারকদিগের আত্মম্ভরিতা দোষে, যে রূপে রাজ্যভ্রষ্ট হইলেন, এক্ষণে তাহার উল্লেখ করা যাইতেছে। ভারতবর্ষের যে সকল পণ্য দ্রব্য এক প্রদেশ হইতে প্রদেশান্তরে নীত হইত, তাহার শুল্ক হইতেই রাজস্বের অধিকাংশ উৎপন্ন হইত। এই রূপে রাজস্ব গ্রহণ করা এক প্রকার অসভ্যতার প্রথা বলিতে হইবেক ; কারণ, ইহাতে বাণিজ্যের বিলক্ষণ ব্যাঘাত জন্মে। কিন্তু, এই কালে, ইহা বিলক্ষণ প্রচলিত ছিল ; এবং ইঙ্গরেজেরাও, ১৮৩৫ খৃঃ অব্দের পূৰ্ব্বে, ইহা রহিত করেন নাই। যখন কোম্পানি বাহাদুর, সালিয়ানা তিন হাজার টাকার পেস্কস দিয়া, বাণিজ্য করিবার অনুমতি পাইয়াছিলেন, তদবধি তদীয় পণ্য দ্রব্যের মাশুল লাগিত না । কলিকাতার গবর্ণর এক দস্তকে স্বাক্ষর করিতেন ; মাশুলঘাটায় তাহ। দেখাইলেই, কোম্পানির বস্তু সকল বিনা মাশুলে চলিয়া যাইত । এই অধিকার কেবল কোম্পানির নিজের বাণিজ্য বিষয়ে ছিল । কিন্তু যখন ইঙ্গরেজের অত্যন্ত পরাক্রান্ত হইয়া উঠিলেন, তখন কোম্পানির যাবতীয় কৰ্ম্মকারকের বাণিজ্য করিতে আরম্ভ করিলেন । যত দিন ক্লাইব এ দেশে ছিলেন, র্তাহার। সকলেই, দেশীয় বণিকদের স্যায়, রীতিমত শুষ্কপ্রদান করিতেন। পরে যখন তিনি স্বদেশে যাত্রা করিলেন, এবং কোন্সিলের সাহেবের অন্ত এক নবাবকে সিংহাসনে বসাইলেন, তখন র্তাহারা, আরও প্রবল হইয়া, বিন শুন্ধেই বাণিজ্য করিতে লাগিলেন । ফলতঃ, তৎকালে
পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।