পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৭৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

অকৃত্রিম প্রণয় দুই ব্যক্তি ইয়ুরোপীয়, দৈবঘটনায়, আলজিয়ার্স প্রদেশে দাসত্বশৃঙ্খলে বদ্ধ হইয়াছিল। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি স্পানিয়ার্ড, তাহার নাম এণ্টোনিয় ; অপর ব্যক্তি ফরাসি, তাহার নাম রজর। প্রত্যহ উভয়ে এক স্থানে কৰ্ম্ম, ও এক সঙ্গে আহারাদি ও অবস্থিতি করিত। ক্রমে ক্রমে পরস্পর প্রণয় জন্মিলে, নিশ্চিন্ত সময়ে, একত্র বসিয়া, উভয়ে দুঃখের কথা কহিত। এই রূপে, পরস্পরের নিকট স্ব স্ব মনোদুঃখ কীৰ্ত্তন করিয়া, তাহদের দাসত্বনিবন্ধন অসহ যন্ত্রণার অনেক লাঘব বোধ হইত। যাহা হউক, জন্মভূমি পিতা মাতা স্ত্রী পুত্র স্বজন প্রভৃতি বিরহিত ও দূরদেশে দাসত্বশৃঙ্খলে বদ্ধ হইয়া, পশুর হ্যায় পরিশ্রম করা অত্যন্ত কষ্টপ্রদ। সে কষ্ট সহা করিয়া কালযাপন করা সহজ ব্যাপার নহে । সমুদ্রের তীরবর্তী এক পৰ্ব্বতের উপর দিয়া যে পথ প্রস্তুত হইতেছিল, তাহার উভয়ে এক দিন ঐ পথের কৰ্ম্ম করিতেছে, এমন সময়ে এণ্টোনিয়, সহসা কৰ্ম্ম হইতে বিরত হইয়া, সমুদ্রে দৃষ্টিনিক্ষেপপূৰ্ব্বক দীর্ঘ নিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া, স্বীয় সহচরকে কহিল, এই অর্ণবের অপর পারে আমার যাবতীয় অভিলষিত পদার্থ আছে ; প্রতিক্ষণেই আমার বোধ হয় যেন আমি এক এক বার দেখিতে পাইতেছি, এবং আমার স্ত্রী ও সন্তানের, সমুদ্রের তীরে আসিয়া, এক দৃষ্টিতে এই দিকে চাহিয়া রহিয়াছে, এবং আমার মৃত্যু হইয়াছে ভাবিয়া, অবিশ্রান্ত অশ্রুপাত করিতেছে ; আমার ইচ্ছা হয়, সন্তরণ দ্বারা এই জলরাশি অতিক্রম করিয়া, তাহাদের নিকটে যাই । ফলতঃ, সেই দিন অবধি, এণ্টোনিয় যখন যখন সেই স্থলে কৰ্ম্ম করিতে যাইত, সেই সময়ে, সমুদ্রে দৃষ্টিপাত করিবামাত্র তাহার অন্ত:করণে ঐরাপ ভাবের আবির্ভাব হইত। এক দিন, কৰ্ম্ম করিতে করিতে, এন্টোনিয় উৰ্দ্ধশ্বাসে দৌড়িয়া গিয়া রজরকে কহিল, সখে ! বোধ হয়, এত দিনের পর আমাদেব দুঃখের অবসান হইল। রজর কহিল, কি রূপে। এণ্টোনিয় কহিল, ঐ দেখ, একখান জাহাজ নঙ্গর করিয়া রহিয়াছে ; উহ। এখান হইতে দুই তিন ক্রোশের অধিক নহে ; এস, আমরা এই পৰ্ব্বতের উপরি ভাগ হইতে ঝাপ দিয়া সমুদ্রে পড়ি, এবং সাতারিয়া গিয়া ঐ জাহাজে উঠি। যদি এই চেষ্টায় কৃতকাৰ্য্য না হইয়া প্রাণত্যাগ করিতে হয়, তাহা এ রূপে দাসত্ব করা অপেক্ষা সহস্র গুণে শ্রেয়স্কর ।