বাঙ্গালার ইতিহাস—দ্বিতীয় ভাগ 'මාණු সকলকেই বস্তুমাত্রের একবিধ মাশুল দিতে হইবেক ; কিন্তু আমার স্বয়ং এরূপ নিয়ম নিৰ্দ্ধারিত করিবার ক্ষমতা নাই ; অতএব, কলিকাতায় গিয়া, কোন্সিলের সাহেবদিগকে এই নিয়ম নিৰ্দ্ধারিত করিতে পরামর্শ দিব। নবাব, অত্যন্ত অনিচ্ছা পূর্বক, এই প্রস্তাবে সম্মত হইলেন ; কিন্তু কহিলেন, যদি ইহাতেও এই অনিয়মের নিবারণ না হয়, আমি মাশুলের প্রথা এক বারে রহিত করিয়া, কি দেশীয়, কি যুরোপীয়, উভয়বিধ বণিকদিগকে সমান করিব । বান্সিটার্ট সাহেব, কেন্সিলে এই বিষয়ের প্রস্তাব করিবার নিমিত্ত, সত্বর কলিকাতায় প্রত্যাগমন করিলেন । কিন্তু মীর কাসিম, কোন্সিলের মতামত পরিজ্ঞান পৰ্য্যন্ত অপেক্ষা না করিয়া, শুল্কসম্পকীয় কৰ্ম্মকারকদিগের নিকট এই আজ্ঞা পাঠাইলেন, তোমরা, ইঙ্গরেজদের নিকট হইতেও, শতকরা নয় টাকার হিসাবে মাশুল আদায় করিবে । ইঙ্গরেজের মাশুল দিতে অসম্মত হইলেন এবং নবাবের কৰ্ম্মকারকদিগকে কয়েদ করিয়া রাখিলেন । মফঃসলের কুঠীর অধ্যক্ষ সাহেবের, কৰ্ম্মস্থান পরিত্যাগ করিয়া, সত্বর কলিকাতায় উপস্থিত হইলেন। শতকরা নয় টাকা শুল্কের বিষয়ে বান্সিটার্ট সাহেব যে প্রস্তাব করিলেন, হেষ্টিংস ভিন্ন অন্য সকলেই, অবজ্ঞা প্রদর্শন পূৰ্ব্বক, তাহ অগ্রাহ করিলেন । তাহার। সকলেই কহিলেন, কেবল লবণের উপর আমরা শতকরা আড়াই টাকা মাত্র শুল্ক দিব । মীর কাসিম তৎকালে বাঙ্গালায় ছিলেন না, যুদ্ধযাত্রায় নেপাল গমন করিয়াছিলেন। তিনি তথা হইতে প্রত্যাগত হইয়া শ্রবণ করিলেন, কোন্সিলের সাহেবের মাশুল দিতে অসম্মত হইয়াছেন, 4 তাহার কৰ্ম্মকারকদিগকে কয়েদ করিয়া রাখিয়াছেন। তখন তিনি, কিঞ্চিম্মাত্র বিলম্ব না করিয়া, পূৰ্ব্ব প্রতিজ্ঞার অনুযায়ী কাৰ্য্য করিলেন, অর্থাৎ বাঙ্গাল ও বিহারের মধ্যে, পণ্য দ্রব্যের শুল্ক এক বারে উঠাইয়া দিলেন। কোন্সিলের মেম্বরেরা শুনিয়া ক্রোধে অন্ধ হইলেন, এবং কহিলেন, নবাবকে, আপন প্রজাদিগের নিকট পূৰ্ব্বমত শুল্ক লইতে হইবেক এবং ইঙ্গরেজদিগকে বিনা শুল্কে বাণিজ্য করিতে দিতে হইবেক । এ বিষয়ে ঘোরতর বিতণ্ডা উপস্থিত হইল। হেষ্টিংস সাহেব কহিলেন, মীর কাসিম অধীশ্বর রাজা, নিজ প্রজাগণের হিতামুষ্ঠান কেন না করিবেন। ঢাকার কুঠার অধ্যক্ষ বার্টুসন সাহেব কহিলেন, এ কথা নবাবের গোমস্তার বলিলে সাজে, কোন্সিলের মেম্বরের উপযুক্ত নহে। হেষ্টিংস কহিলেন, পাজী না হইলে, এরূপ কথা মুখে আনে না।
পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৯
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।