পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৯৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৫৭২ বিদ্যাসাগর-গ্ৰস্থাবলী—শিক্ষা কিছু দিন পরেই, এক জাহাজ ইটালি যাইতেছে জানিতে পারিয়া, যুবর্টে সেই যুবককে স্বদেশে পাঠাইয় দেওয়া অবধারিত করিলেন । প্রস্থানকালে, তিনি তাহাকে, পাথেয়ের উপযোগী অর্থ ও অন্যান্য অবিশ্বক দ্রব্য প্রদান করিয়া, কহিলেন, বৎস! তোমার উপর আমার এমনই স্নেহ জন্মিয়াছে যে, তোমাকে ছাড়িয়া দিতে আমার কোন মতে ইচ্ছা হইতেছে না ; তোমার পিতা মাতা তোমার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল আছেন এবং অনবরত বিলাপ ও পরিতাপ করিতেছেন, কেবল এই অনুরোধে আমি তোমায় তাহাদের নিকটে প্রেরণ করিতেছি, নতুব। আমি তোমায় অন্ততঃ আর কিছু দিন আমার নিকটে রাখিতাম । যাহা হউক, জগদীশ্বরের নিকট প্রার্থনা করিতেছি, নিরাপদে স্বদেশে প্রতিগমন করিয়া, জনক জননীর শোকাপনোদন ও আনন্দবৰ্দ্ধন কর । এই বলিয়, একখানি পত্র তাহার হস্তে সমর্পণ করিয়া, যুবটো কহিলেন, এই পত্ৰখানি তোমার পিতাকে দিবে। সেই যুবক, তদীয় স্নেহ, সদাশয়তা ও অমায়িকতার আতিশয্যদর্শনে, মুগ্ধ হইয়া কহিল, মহাশয় । আপনি আমার প্রতি যেরূপ স্নেহ ও অনুগ্রহ প্রদর্শন করিয়াছেন, কেহ কখন কাহার প্রতি সেরূপ করে না ; আপনকার স্নেহ ও দয়া যাবজ্জীবন আমার অন্তঃকরণে জাগরূক থাকিবেক, আমি এক দিন এক মুহূৰ্ত্তের নিমিত্তে তাহা বিস্মৃত হইতে পারিব না ; প্রার্থন এই, আপনি যেন এ চিরক্রীত অধীনকে বিস্মৃত না হন । এই বলিয়া, সে, অকৃত্রিম ভক্তি প্রদর্শনপূর্বক, প্রণাম ও আলিঙ্গন করিল। যুবটে, স্নেহভরে গাঢ় আলিঙ্গন করিয়া, গলদশ্রু লোচনে দণ্ডায়মান রহিলেন ; যুবক অশ্রুবিসর্জন করিতে করিতে প্রস্থান করিল। এডর্ণো ও র্তাহার সহধৰ্ম্মিণী, বহু দিন পুত্রের কোন উদ্দেশ না পাইয়া, স্থির করিয়াছিলেন, সে নিঃসন্দেহ কালগ্রাসে পতিত হইয়াছে ; সুতরাং, তাহার পুনর্দর্শনবিষয়ে নিতান্ত নিরাশ হইয়াছিলেন। এক্ষণে, সেই যুবক সহসা র্তাহীদের সম্মুখে উপস্থিত হইলে, র্তাহারা চমৎকৃত ও আহলাদসাগরে মগ্ন হইলেন, এবং উভয়েই, এক কালে স্নেহভরে গাঢ় আলিঙ্গন করিয়া, প্রভূত আনন্দাশ্র বিসর্জন করিতে লাগিলেন ; তিন জনেই কিয়ৎ ক্ষণ জড়প্রায় হইয়া রহিলেন, কাহার মুখ হইতে বাক্যনিঃসরণ হইল না। অনন্তর, এডণেী ও র্তাহার সহধৰ্ম্মিণী জিজ্ঞাসা করিলেন, বৎস! তুমি এত দিন কি রূপে কোথায় ছিলে, বল। তখন সেই যুবক, যেরূপে অবরুদ্ধ ও দাসত্বশৃঙ্খলে বদ্ধ হয়, তাহার সবিস্তর বর্ণন করিলে, এডর্ণে বাষ্পপূর্ণ নয়নে কহিলেন, কোন মহানুভাব, তোমায় দাসত্বশৃঙ্খল হইতে মুক্ত করিয়া, আমাদিগকে জন্মের মত কিনিয়া রাখিলেন, বল। সে কহিল, এই পত্র পাঠ করিলে সকল অবগত হইতে পারিবেন।