পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৫৯৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

আখ্যানমঞ্জরী—তৃতীয় ভাগ ¢ ዓ¢ অবশেষে, মিসনরি মহোদয় অত্যন্ত বিরক্ত হইয়া উঠিলেন। তদীয় আদেশক্রমে, র্তাহার ভূত্যেরা এক দিন ঐ স্ত্রীলোককে নিতান্ত নির্দয় প্রহার করিল। অনন্তর, তিনি এই ব্যবস্থা করিলেন, উহার পুত্রেরা এখানে থাকুক, উহাকে অন্য এক আশ্রমে পাঠান যাউক । তদনুসারে, সে একাকিনী আতাবাপে নদীর তীরবত্তী আশ্রমান্তরে প্রেরিত হইল। মিসনরিভৃত্যের, হস্তবন্ধনপূর্বক নৌকায় আরোহণ করাইয়া, তাহাকে ঐ আশ্রমে লইয়৷ চলিল। সে, আমায় কি অভিপ্রায়ে কোথায় লইয়। যাইতেছে, তাহার কিছুই অবধারণ করিতে পারিল না ; কিন্তু, ইহা বুঝিতে পারিল, অনেক দূরে লইয়া যাইতেছে ; অত্যন্ত দূরবত্তী হইলে, আর আমি আবাসে আসিতে, এবং পতিদর্শন ও পুত্রমুখনিরীক্ষণ করিতে, পাইব না ; সেই জন্যই ইহার। আমায় এরূপে স্থানান্তরিত করিতেছে। এই সমস্ত ভাবিয়া, নিতান্ত হতাশ হইয়া, ঐ স্ত্রীলোক, অকস্মাৎ আবির্ভূত প্রভূত বল সহকারে, হস্তের বন্ধনচ্ছেদনপূর্বক, ঝম্প প্রদান করিল এবং সন্তরণ করিয়া নদীর অপর পারে চলিল। স্রোতের প্রবলত বশতঃ, অনেক দূর ভাসিয়া গিয়া, সে তীরবর্তী গণ্ডশৈলের পাদদেশে সংলগ্ন হইল। ঐ গণ্ডশৈল, এই ঘটনা প্রযুক্ত, অদ্যাপি মাতৃশৈল নামে প্রসিদ্ধ আছে। সে তীরে উত্তীর্ণ হইয়া, অরণ্য প্রবেশপূৰ্ব্বক, লুকাইয়া রহিল ; তদর্শনে নৌকাস্থিত মিসনরি, সাতিশয় কুপিত হইয়া, ঐ পৰ্ব্বতের নিকট নৌকা লাগাইতে আদেশ প্রদান করিলেন। নৌকা সেই স্থানে লগ্ন হইলে, তদীয় আদেশক্রমে, ভূত্যেরা, অরণ্যে প্রবেশ করিয়া, সেই স্ত্রীলোকের অন্বেষণ করিতে লাগিল ; কিয়ৎ ক্ষণ পরে, দেখিতে পাইল, সে নিতান্ত ক্লান্ত হইয়া, গণ্ডশৈলের পাদদেশে মৃতবৎ পতিত আছে। তাহারা, তাহাকে উঠাইয়া নৌকায় প্রত্যানয়ন ও যৎপরোনাস্তি প্রহারপূর্বক, তাহার দুই হস্ত পৃষ্ঠদেশে লইয়া দৃঢ় রূপে বন্ধন করিল এবং জীবিতানমিকস্থানবাসী মিসনরিদিগের আশ্রমে লইয়। চলিল । জাবিতায় নীত হইয়া, সেই স্ত্রীলোক এক গৃহে রুদ্ধ রহিল। এই স্থান সানফরনাণ্ডে হইতে চল্লিশ ক্রোশ বিপ্রকৃষ্ট ; মধ্যবৰ্ত্তী প্রদেশ গভীর অরণ্য দ্বারা পরিবৃত ; সেই অরণ্য ছগুপ্ৰবেশ ও দুরতিক্রম বলিয়া তৎকাল পর্য্যন্ত তত্ৰত্য লোকমাত্রের বোধ ও বিশ্বাস ছিল । কেহ কখন স্থলপথে এক স্থান হইতে স্থানান্তরে যাইবার চেষ্টা করিত না । ফলতঃ, যাতায়াতের পক্ষে জলপথ ভিন্ন উপায়াস্তর পরিজ্ঞাত ছিল না। বিশেষত, বর্ষাকাল ; বর্ষাকালে ঐ প্রদেশে গগনমণ্ডল নিরন্তর নিবিড় ঘনঘটায় আচ্ছন্ন থাকে ; রাত্রিকাল এরূপ অন্ধতমসে সমাবৃত হয় যে, কোন ব্যক্তি বা বস্তু, সম্মুখে থাকিলেও, লক্ষ্য করিতে পারা যায়