পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৬৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংস্কৃতভাষা ও সংস্কৃতসাহিত্যশাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব ৬২১ গীতগোবিন্দ আদ্যোপান্ত সঙ্গীতময়, কেবল মধ্যে মধ্যে শ্লোক আছে। সঙ্গীতসমূহে রাগতানের বিলক্ষণ সমাবেশ আছে। অনেকানেক কলাবতের, ভাষাসঙ্গীতের স্যায়, গীতগোবিন্দ গান করিয়া থাকেন। গীতগোবিন্দে রাধা ও কৃষ্ণের লীলা বর্ণিত হইয়াছে । জয়দেব পরম বৈষ্ণব ছিলেন এবং প্রগাঢ় ভক্তিযোগ সহকারে বৈষ্ণবদিগের পরম দেবতা রাধাকৃষ্ণের লীলা বর্ণন করিয়াছেন । এরূপ কিংবদন্তী আছে, এবং বৈষ্ণবসম্প্রদায়ের লোকেরা অদ্যাপি বিশ্বাস করিয়া থাকেন যে, গীতগোবিন্দের "দেহি পদপল্লবমুদারম্” এই অংশটি কৃষ্ণ জয়দেবের আবাসে আসিয়া স্বহস্তে লিখিয়া গিয়াছেন । রাধার মানভঞ্জনার্থে যখন কৃষ্ণ অনুনয় করিতেছেন, সেই স্থলে, “মম শিরসি মণ্ডনং, দেহি পদপল্লবমুদারম,” এই বাক্য লিখিত আছে। ইহার অর্থ এই, ( কৃষ্ণ রাধিকাকে কহিতেছেন) তোমার উদার পদপল্লব আমার মস্তকে ভূষণস্বরূপ অর্পণ কর । জয়দেব “মণ্ডনং” পৰ্য্যন্ত লিখিয়া, এই ভাবিয়া, “দেহি পদপল্লবমুদারম” এই অংশ সাহস করিয়া লিখিতে পারিতেছেন না যে, প্রভুর মস্তকে পদার্পণের কথা কিরূপে লিখিব। পরিশেষে, ঐ অংশ লিখিতে কোন ক্রমেই সাহস না হওয়াতে, সে দিবস লেখা রহিত করিয়া তিনি মানে গমন করিলেন । কিন্তু কৃষ্ণ অত্যন্ত রসিক, সামান্ত নায়কের হ্যায় বর্ণিত হইলে, অপরাধ গ্রহণ করেন এরূপ নহেন ; বরং তাহার প্রণয়িনীর পদপল্লব তদীয় মস্তকে অপিত বর্ণন করিলে, প্রসন্নই হয়েন । অতএব তিনি, প্রস্তুত বিষয়ে স্বীয় পরিতোষ দর্শাইবার এবং পরমভাগবত জয়দেবকে চরিতার্থ করিবার নিমিত্ত, জয়দেবের স্নানোত্তর প্রত্যাগমনের কিঞ্চিৎ পূৰ্ব্বে, তদীয় আকার অবলম্বন করিয়া, স্নাতপ্রত্যাগত জয়দেবের ন্যায়, তাহার গৃহে উপস্থিত হইলেন। জয়দেবের ব্রাহ্মণী পদ্মাবতী রীতিমত অন্ন ব্যঞ্জন প্রস্তুত করিয়া দিলেন । জয়দেবরূপী কৃষ্ণ সেই অন্ন ব্যঞ্জন আহার করিলেন এবং আহারান্তে জয়দেবের পুস্তক বহিষ্কৃত করিয়া, “দেহি পদপল্লবমুদারম্” এই অংশ স্বহস্তে লিখিয়া রাখিলেন। অনন্তর পদ্মাবতী, শয্যা প্রস্তুত করিয়া তাহাকে শয়ন করাইয়া, রীতিমত তদীয় পাত্রাবশিষ্ট প্রসাদ পাইতে বসিলেন । এই অবসরে প্রকৃত জয়দেবও স্নান করিয়া গৃহ প্রত্যাগমন করিলেন। জয়দেব জানিতেন, পদ্মাবতী প্রতিদিন পাত্রাবশিষ্ট প্রসাদ পাইয়া থাকেন, প্রাণান্তেও কদাপি তাহার আহারের পুৰ্ব্বে জলগ্রহণ করেন না। সে দিবস তাহাকে অগ্ৰে আহারে প্রবৃত্ত দেখিয়া, চমৎকৃত হইয়া হেতু জিজ্ঞাসা করিলে, তিনি পুৰ্ব্বাপর সমস্ত ব্যাপার বর্ণন করিলেন। জয়দেব, যৎপরোনাস্তি বিস্ময়াপন্ন হইয়া, পুস্তক উদঘাটন করিয়া দেখিলেন, “দেহি পদপল্লবমুদারম্” এই অংশটি লিখিত রহিয়াছে।