পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৬৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সংস্কৃতভাষা ও সংস্কৃতসাহিত্যশাস্ত্রবিষয়ক প্রস্তাব ৬৩১ দেখিতে পাওয়া যায়। নাটক আছোপান্ত গদ্যে রচিত, কেবল মধ্যে মধ্যে শ্লোক থাকে। আদি অবধি অস্ত পৰ্য্যস্ত এক ভাষায় রচিত নহে, ব্যক্তিবিশেষের বক্তব্য ভাষাবিশেষে সঙ্কলিত হইয়া থাকে। রাজা, মন্ত্রী, ঋষি, পণ্ডিত, নায়ক প্রভৃতি প্রধান পুরুষেরা সংস্কৃতভাষী ; স্ত্রী, বালক ও অপ্রধান পুরুষদিগের ভাষা প্রাকৃত। প্রাকৃত সংস্কৃতের অপভ্রংশ। আলঙ্কারিকের এই অপভ্রংশের, কিঞ্চিৎ কিঞ্চিৎ বৈলক্ষণ্যনিবন্ধন, সপ্তদশ ভেদ কল্পনা করিয়াছেন। স্ত্রীলোকের মধ্যে পণ্ডিত। তপস্বিনীর সংস্কৃতভাষিণী । অশুভ ঘটনা দ্বারা ংস্কৃত নাটকের উপসংহার করিতে নাই। সংস্কৃত ভাষায় আদিরস, বীররস ও করুণরস প্রধান নাটক অনেক । মহাকাব্য, খণ্ডকাব্য ও কোযকাব্যের ন্যায়, সংস্কৃত ভাযায় নাটকও অনেক আছে । কালিদাস প্রভৃতি প্রধান কবিগণ এই ভাষায় নাটক রচনা করিয়া গিয়াছেন। এক সময়ে এই ভারতবর্ষে রঙ্গভূমিতে সংস্কৃত নাটকের অভিনয় হইত। ভারতবর্ষীয় পণ্ডিতের ভরতমুনিকে সংস্কৃত নাট্যশাস্ত্রের স্মৃষ্টিকৰ্ত্ত বলিয়া নির্দেশ করিয়া থাকেন। তাহারা ইহাও কহেন, এই ভরতমুনি অপারাদিগের নাট্যব্যাপারের উপদেষ্ট । অপারার, ইহার নিকট উপদিষ্ট হইয়া, দেবরাজ ইন্দ্রের সভায়, নাটকের অভিনয় করিয়া থাকে। এরূপ নাট্যাচাৰ্য্য যে কোন কালেই বিদ্যমান ছিলেন না, এ বিষয়ে সংশয় হইতে পারে না । কিন্তু, সংস্কৃত আলঙ্কারিকেরা স্ব স্ব গ্রন্থে মধ্যে মধ্যে ভরতস্বত্র বলিয়া প্রমাণ উদ্ধত করিয়া থাকেন। তাহাতে ইহাই প্রতীয়মান হইতেছে, নাটকরচনা বিষয়ে সংস্কৃত ভাষায় এক অতি প্রাচীন গ্রন্থ ছিল ; ভারতবর্ষীয় পণ্ডিতেরা, অবিসংবাদিত প্রামাণ্য সংস্থাপনার্থে, ঐ গ্রন্থ ঋষিপ্রণীত বলিয়া নির্দেশ করিয়াছেন । কেবল এই বিষয়েই নহে, অন্যান্য বিদ্যাবিষয়েও, এই প্রথা লক্ষিত হইতেছে । সৰ্ব্বাপেক্ষ প্রাচীন ব্যাকরণ পাণিনিমুনিপ্রণীত বলিয়া প্রচলিত। ঐ ব্যাকরণের বাৰ্ত্তিক কাত্যায়ন মুনির রচিত, ভাষ্য পতঞ্জলিমুনিপ্রণীত। যে সর্পরাজ অনন্তদেব, পুরাণমতানুসারে, সসাগর সদ্বীপা পৃথিবী ফণমগুলোপরি ধারণ করিয়া আছেন, পতঞ্জলি তাহার অবতার। সৰ্পের অবতার মুনির রচিত বলিয়া, ঐ ভাষ্য ফণিভাষ্য নামে প্রসিদ্ধ। যাবতীয় পুরাণ মহর্ষিব্যাসরচিত বলিয়া প্রচলিত। ধৰ্ম্মশাস্ত্র সকল মনু, অত্রি, হরীত, যাজ্ঞবল্ক্য প্রভৃতি এক এক মুনির রচিত বলিয়া প্রসিদ্ধ। সাঙ্খ্য ও পাতঞ্জল, ন্যায় ও বৈশেষিক, বেদান্ত ও মীমাংসা এই ছয় দর্শন কপিল ও পতঞ্জলি, গৌতম ও কণাদ, ব্যাস ও জৈমিনি এই ছয় মুনির নামে প্রচলিত। তন্ত্র সকল যে ইদানীন্তম কালের রচিত গ্রন্থ, তাহার কোন সংশয়