88 বিদ্যাসাগর-গ্রন্থাবলী—শিক্ষা সমুদয় রাজস্ব যুদ্ধব্যয়েই পৰ্য্যবসিত হইতেছে, অতএব সন্ধি করা অতি আবশ্যক, এই বিবেচনা করিয়া, ক্লাইব, জুন মাসের চতুবিংশ দিবসে, পশ্চিম অঞ্চল যাত্রা করিলেন। নজম উদ্দৌলার সহিত এইরূপ সন্ধি হইল যে, ইঙ্গরেজের রাজ্যের সমস্ত বন্দোবস্ত করিবেন ; তিনি, আপন ব্যয়নিৰ্ব্বাহের নিমিত্ত, প্রতিবৎসর পঞ্চাশ লক্ষ টাকা পাইবেন ; মহম্মদ রেজা খা, রাজা দুর্লভরাম, ও জগৎ শেঠ, এই তিন জনের মত অনুসারে, ঐ পঞ্চাশ লক্ষ টাকা ব্যয়িত হইবেক । কিছু দিন পরে, অযোধ্যার নবাবের সহিত সন্ধি হইল । এই যাত্রায় যে সকল কাৰ্য্য নিম্পন্ন হয়, দিল্লীর সম্রাটের নিকট হইতে, কোম্পানির নামে তিন প্রদেশের দেওয়ানী প্রাপ্তি সে সকল অপেক্ষা গুরুতর। পূৰ্ব্বে উল্লিখিত হইয়াছে, সম্রাট অঙ্গীকার করিয়াছিলেন, ইঙ্গরেজের যখন প্রার্থনা করিবেন, তখনই তিনি তাহাদিগকে তিন প্রদেশের দেওয়ানী দিবেন। ক্লাইব, এলাহাবাদে তাহার সহিত সাক্ষাৎ করিয়া, ঐ প্রতিজ্ঞার পরিপূরণের প্রার্থনা করিলেন। তিনিও তৎক্ষণাৎ সম্মত হইলেন। ১২ই আগষ্ট, সম্রাট কোম্পানি বাহাদুরকে বাঙ্গালা, বিহার, ও উড়িষ্যার দেওয়ানী প্রদান করিলেন ; আর, ক্লাইব স্বীকার করিলেন, উৎপন্ন রাজস্ব হইতে সম্রাটকে প্রতিমাসে দুই লক্ষ টাকা দিবেন। তৎকালে, সম্রাট আপন রাজ্যে পলায়িত স্বরূপ ছিলেন । র্তাহার রাজকীয় পরিচ্ছদ আদি ছিল না । ইঙ্গরেজদিগের খান খাইবার দুই মেজ একত্রিত ও কাৰ্ম্মিক বস্ত্রে মণ্ডিত করিয়া, সিংহাসন প্রস্তুত করা হইল। সমস্ত ভারতবর্ষের সম্রাট, তদুপরি উপবিষ্ট হইয়া, বার্ষিক দুই কোটি টাকার রাজস্ব সহিত, তিন কোটি প্রজা ইঙ্গরেজদেগের হস্তে সমৰ্পিত করিলেন। তৎকালীন মুসলমান ইতিহাসলেখক এ বিষয়ে এই ইঙ্গিত করিয়াছেন, পূৰ্ব্বে, এরূপ গুরুতর ব্যাপারের নির্বাহ কালে, কত অভিজ্ঞ মন্ত্রীর ও কাৰ্য্যদক্ষ দূতের প্রেরণ, এবং কত বাদানুবাদের আবশ্যকতা হইত ; কিন্তু, এক্ষণে, ইহা এত স্বল্প সময়ে সম্পন্ন হইল যে, একটা গৰ্দ্দভের বিক্রয়ও ঐ সময় মধ্যে সম্পন্ন হইয়া উঠে না । পলাশির যুদ্ধের পর, ইঙ্গরেজদিগের পক্ষে যে সকল হিতকর ব্যাপার ঘটে, এই বিষয় সে সকল অপেক্ষা গুরুতর। ইঙ্গরেজের, ঐ যুদ্ধ দ্বারা, বাস্তবিক এ দেশের প্রভু হইয়াছিলেন বটে ; কিন্তু এতদেশীয় লোকেরা, এ পর্য্যস্ত, র্তাহাদিগকে সেরূপ মনে করিতেন না ; এক্ষণে, সম্রাটের এই দান দ্বারা, তিন প্রদেশের যথার্থ অধিকারী বোধ
পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৬৬
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।