পাতা:বিদ্যাসাগর গ্রন্থাবলী (শিক্ষা ও বিবিধ).djvu/৬৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বাঙ্গালার ইতিহাস—দ্বিতীয় ভাগ 8ጫ ক্লাইব, ভারতবর্ষে আসিয়া, বিংশতি মাসে, কোম্পানির কাৰ্য্যের সুশৃঙ্খলার স্থাপন ও ব্যয়ের লাঘব করিলেন, তিন প্রদেশের দেওয়ানী প্রাপ্তি দ্বারা রাজস্ববৃদ্ধি করিয়া, প্রায় দুই কোটি টাকা বার্ষিক আয় স্থিত করিলেন, এবং সৈন্য মধ্যে যে ঘোরতর বিদ্রোহ উপস্থিত হয়, তাহার শান্তি করিয়া, বিলক্ষণ সুরীতি স্থাপিত করিলেন। তিনি, এই সমস্ত গুরুতর পরিশ্রম দ্বারা, শারীরিক এরূপ ক্লিষ্ট হইলেন যে, স্বদেশে প্রস্থান না করিলে আর চলে না। অতএব, ১৭৬৭ খৃঃ অব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে, তিনি জাহাজে আরোহণ করিলেন। ইঙ্গরেজের তিন প্রদেশের দেওয়ানী প্রাপ্ত হইয়াছিলেন বটে, কিন্তু রাজস্ব সংক্রান্ত কাৰ্য্য বিষয়ে নিতান্ত অনভিজ্ঞ ছিলেন । যুরোপীয় কৰ্ম্মচারীরা এ পর্য্যন্ত বাণিজ্য কাৰ্য্যেই ব্যাপৃত ছিলেন ; ভূমির করসংগ্রহ বিষয়ে কিছুই অবগত ছিলেন না। পূৰ্ব্ব পূর্ব সুবাদারের, হিন্দুদিগকে সাতিশয় সহিষ্ণুস্বভাব ও হিসাবে বিলক্ষণ নিপুণ দেখিয়া, এই সকল বিষয়ের ভার তাহদের হস্তে হস্ত রাখিতেন । ইঙ্গরেজেরা এ দেশের তাবৎ বিষয়েই অজ্ঞ ছিলেন ; সুতরাং, তাহাদিগকেও সমস্ত ব্যাপারই, পূৰ্ব্ব রীতি অনুসারে, প্রচলিত রাখিতে হইল। রাজ সিতাব রায়, বিহারের দেওয়ানের কৰ্ম্মে নিযুক্ত হইয়া, পাটনায় অবস্থিতি করিলেন ; মহম্মদ রেজা খা, বাঙ্গালার দেওয়ান হইয়া, মুরশিদাবাদে রহিলেন । প্রায় সাত বৎসর, এই রূপে রাজশাসন সম্পন্ন হয়। পরে, ১৭৭২ খৃঃ অব্দে, ইঙ্গরেজের স্বয়ং সমস্ত কার্য্যের নিবাহ করিতে আরম্ভ করেন । এই কয় বৎসর, রাজশাসনের কোনও প্রণালী বা শৃঙ্খলা ছিল না। জমীদার ও প্রজাবৰ্গ, কাহাকে প্রভু বলিয়। মান্ত করিবেন, তাহার কিছুই জানিতেন না। সমস্ত রাজকার্য্যের নির্ববাহের ভর নবাব ও তদীয় অমাত্যবর্গের হস্তে ছিল । কিন্তু ইঙ্গরেজেরা, এ দেশের সববত্র, এমন প্রবল হইয়াছিলেন যে, তাহার, যৎপরোনাস্তি অত্যাচার করিলেও, রাজপুরুষেরা তাহাদের শাসন করিতে পারিতেন না। আর, পালিমেণ্টের বিধান অনুসারে, কলিকাতার গবর্ণর সাহেবেরও এমন ক্ষমতা ছিল না যে, মহারাষ্ট্ৰখাতের বহির্ভাগে কোনও ব্যক্তি কোনও অপরাধ করিলে, তাহার দণ্ডবিধান করিতে পারেন । ফলতঃ, ইঙ্গরেজদিগের দেওয়ানী প্রাপ্তির পর, সাত বৎসর, সমস্ত দেশে যার পর নাই বিশৃঙ্খলা ও অতি ভয়ানক অত্যাচার ঘটিয়াছিল। এই রূপে, রাজশাসন বিষয়ে নিরতিশয় বিশৃঙ্খলা ঘটাতে, সমস্ত দেশে ডাকাইতীর ভয়ানক প্রাদুর্ভাব হইয়াছিল। সকল জিলাই ডাকাইতের দলে পরিপূর্ণ হইয় উঠে ; তজ্জন্ত, কোনও ধনবান ব্যক্তি নিরাপদে ছিলেন না। ফলতঃ, ডাকাইতীর এত বাড়াবাড়ি